ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আফগানিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের মাত্রার তুলনায় দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যাও বেশি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলের কাছে অবস্থানের কারণে দেশটি এমনিতেই ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চল। পাশাপাশি দুর্বল অবকাঠামো ও পাহাড়ি এলাকার ভূমিধস ভূমিকম্পের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ গত সোমবার দেশটির কুনার প্রদেশে সংঘটিত ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪১১ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩ হাজার ২৫১ জন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০১৫ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানের হিন্দু-কুশ অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অন্তত ২৭২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অনেকে। ২০২২ সালের জুনে দেশটির পাকতিকা প্রদেশে আঘাত হানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে হতাহত হয় হাজারের বেশি বাসিন্দা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর তিন দিন পর ১১ অক্টোবর প্রদেশটিতে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার এবং ১৫ অক্টোবর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরও দুটি ভূমিকম্প হয়। এতে অন্তত আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত সোমবার আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে আঘাত হানে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প। এখনো ধসে পড়া বহু স্থাপনার নিচে আটকে আছে মানুষ। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা চেয়েছে তালেবান সরকার।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থমকে গেছে। দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক সহায়তাও বন্ধ করে দিয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল সোমবার রাতেও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কুনার প্রদেশে। মূলত মাটির মাত্র ৬ মাইল গভীরে এই ভূমিকম্প হওয়ায় বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা।আফগান কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায়ও উদ্ধারকারীরা পৌঁছতে পারেননি। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সারাফাত জামান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের এটি প্রয়োজন। কারণ, অনেক মানুষ তাদের জীবন ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ইউসুফ হাম্মাদ গতকাল মঙ্গলবার জানান, আহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, গত রোববারের মধ্যরাতে সংঘটিত ভূমিকম্পের প্রভাব দেশটিকে দীর্ঘদিন বহন করতে হবে। কুনার প্রদেশের তিনটি গ্রামের প্রায় সব বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। এই প্রদেশেই নিহতের সংখ্যা ৬০০ । ধ্বংস চিহ্নের একটি কুনারের নুরগাল জেলার ঘাজি আবাদ গ্রাম। এখানে প্রায় সব ঘরবাড়িই ভেঙে গেছে। অনেক বাসিন্দা ধ্বংস্তূপের নিচে আটকে আছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। উদ্ধার করছেন আটকে পড়াদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, গ্রামের কোনো বসতবাড়িই আর টিকে নেই। এমন দুর্যোগ আমাদের বোঝাচ্ছে, জীবন এখানে যেকোনো মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে।