কাতারে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পর মুসলিম বিশ্বের ঘুম ভাঙছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই নজিরবিহীন ঘটনার পর মুসলিম দেশগুলো দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। নিজ ভূখ-ে আক্রান্ত হওয়ার পর কাতার জরুরি আরব ইসলামিক সম্মেলন ডেকেছে। এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতারা উপস্থিত থাকবেন এবং ইসরায়েলের হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার বিষয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের নেতারা কাতারে অবস্থান করছেন।
উপসাগরীয় আরব দেশগুলো কয়েক দশক ধরে নিজেদের স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছিল। ঝলমলে রাজধানী, দ্রুত বেড়ে ওঠা অর্থনীতি আর লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের ঘামে গড়া সমৃদ্ধির আড়ালে নিজেদের সুরক্ষিত মনে করেছিল তারা। কিন্তু চলতি বছর সেই নিরাপত্তাবোধ অনেকটাই ভেঙে পড়েছে।
প্রথমে, গত জুনে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার অজুহাতে কাতারে আঘাত হানে ইরান। এরপর চলতি সপ্তাহে ইসরায়েল হামলা চালায় দোহায়। তাদের দাবি, হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
দুই বছর আগে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধ এখন উপসাগরের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে অঞ্চলটি। সামরিক প্রতিশোধের তেমন সুযোগ না থাকায় কাতার জানিয়েছে, আঞ্চলিকভাবেই ‘সম্মিলিত জবাব’ দেওয়া হবে। সেই পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং সপ্তাহান্তে দোহায় আয়োজিত আরব-ইসলামিক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর সবচেয়ে দ্রুত সাড়া দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোহায় পৌঁছান, এরপর বাহরাইন ও ওমান সফর করেন। গত শুক্রবার ইসরায়েলি কূটনীতিককে তলব করে কাতারে হামলাকে ‘নিষ্ঠুর ও কাপুরুষোচিত’ বলে নিন্দা জানায় আমিরাত।
বিশ্লেষকদের মতে, কূটনৈতিক পর্যায়ে আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করতে পারে বা আব্রাহাম অ্যাকর্ডস থেকে আংশিক সরে আসতে পারে। কাতারও জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের পথ ব্যবহার করা হবে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে সর্বসম্মত বিবৃতি আনতে সফল হয়েছে দোহা।
নিরাপত্তা চুক্তি
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকলেও এখন পর্যন্ত তা কেবল কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। সৌদিভিত্তিক গালফ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ সাগের বলেছেন, ‘পেনিনসুলা শিল্ড ফোর্স’ সক্রিয় করার সময় এসেছে। এতে যৌথ কমান্ড, সমন্বিত আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং স্বাধীন সামরিক সক্ষমতা গড়ে তোলার প্রস্তাব আছে।
তবে উপসাগরীয় নিরাপত্তা কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় দেশগুলো এখন আরও শক্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন তৈরি হবে।
অর্থনৈতিক চাপ
কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত ও আমিরাতের বিশাল সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বয়কট করা বা বিনিয়োগ সীমিত করা হতে পারে।
কুয়েতি অধ্যাপক বাদের আল-সাইফ সতর্ক করে বলেছেন, এখনই শক্ত অবস্থান না নিলে অন্য কোনো উপসাগরীয় রাজধানী হতে পারে পরবর্তী টার্গেট।