ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নারী কেলেংকারি

চাকরির প্রলোভনে ১৭ নারীকে বিয়ে!

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম
  • কর্মকর্তা কবিরের শাস্তি চেয়ে ১২ স্ত্রীর মানববন্ধন 
  • সাবেক কর্মস্থলে সুন্দরী নারীদের বিদেশে লেখাপড়া ও সরকারি চাকরির প্রলোভনে বিয়ে করতেন
  • পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে যৌতুক আদায়সহ শারীরিক নির্যাতন করতেন

দাপ্তরিক কাজে অনিয়ম-দুর্নীতিতে পটু বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কবির হোসেন পাটোয়ারীর ভয়ংকর নারী কেলেংকারি ফাঁস হয়েছে। অতীতে দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অবস্থায় অন্তত ১৭ নারীকে সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে এবং পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ডিভোর্স দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীর এই নারী কেলেংকারির ঘটনায় নিয়ে বরিশালে কানাঘুষা চললেও গত বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী দাবি করে ১২ নারীর মানববন্ধনের ঘটনায় বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাসিন্দা কবির হোসেন পাটোয়ারী এর আগে রাজধানী ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। সাবেক এসব কর্মস্থলে সুন্দরী তরুণীদের বিদেশে পড়াশোনা ও সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে ১৭টি বিয়ে করেছেন তিনি। পরবর্তীতে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে উল্টো তরুণীদের পরিবারের লোকজনদের কাছে মোটা অংকের টাকা যৌতুক দাবি করেন। এ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তাদের অনেককে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি ডিভোর্স দেওয়ার অভিযোগ আছে।

এই নারীলিপ্সু কর্মকর্তা সবশেষ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুলনার খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করেন। অভিযোগ আছে, বিয়ের দ্বিতীয় দিনে স্ত্রীর কাছে তার বাবার বাড়ির অংশ লিখে দেওয়ার দাবি করেন কবির। এতে রাজি না হওয়ায় খাদিজাকে বরিশালের সরকারি বাসভবন থেকে বের করে দেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার বরিশাল শহরের কাশিপুর বন বিভাগের সামনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে কবিরের ১২ স্ত্রী দাবি করে যারা মানববন্ধন করেছেন, তাদের মধ্যে সর্বশেষ স্ত্রী খাদিজা আক্তারও উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, যখন কার্যালয়ের সামনে মহাসড়কে মানববন্ধন চলছিল, তখন বন কর্মকর্তা কবির অফিসে কর্মরত ছিলেন।  
ভুক্তভোগী নারী খাদিজা জানান, তার প্রতারক স্বামী ঢাকাসহ যেসব স্থানে কর্মরত ছিলেন সেখানেই তিনি ২-৪টি করে বিবাহ করেন। ঢাকার নাজনিন আক্তার শীলা, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া এবং খুলনার নাসরিন আক্তার দোলনসহ এ পর্যন্ত ১৭ নারীকে বিয়ে করেছেন। 

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নাসরিন আক্তারও বন কর্মকর্তা কবির হোসেনের স্ত্রী দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কবির বিয়ে করেছেন। পরে তার এই বিয়ে বিয়ে খেলার নাটক ধরা পড়লে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। 

সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবী কবির হোসেন ১৭ বিয়ে করলেও তার খায়েশ মেটেনি, তিনি সর্বশেষ খুলনার স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে এখন ১৮ নম্বর বিয়ে করতে চাইছেন। মূলত এই খবরে প্রতারিত ১২ স্ত্রী একত্র হয়ে বিদ্রোহের পথ বেঁছে নিয়েছেন। 

স্ত্রীদের অভিযোগ, নারীলোভী বন কর্মকর্তা কবির প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন। ১৭ নম্বর স্ত্রী খাদিজাকে মারধর করে বরিশালের বাসা থেকে তাড়িয়ে নতুন একটি বিবাহ করার উম্মাদনায় মত্ত রয়েছেন। প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিকবার থানা পুলিশ করেও কোনো সুফল মেলেনি। সর্বশেষ বাধ্য হয়ে তার অপসারণসহ শাস্তির দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে।

বন কর্মকর্তা কবিরের ১৭ বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পরে বরিশালের প্রশাসনিক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে ওই কর্মকর্তার বক্তব্য না পাওয়া গেলেও বরিশাল জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলছেন, বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছেন। পরবর্তীতে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এই বন কর্মকর্তা দাপ্তরিক অনিয়ম-দুর্নীতিতেও কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন। তিনি প্রতারণার অভিযোগে একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন, পরে অবশ্য জামিনে মুক্ত হন।