- ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির আবেদন
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে ৫২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদির মোল্লাকে ‘চাপ ও ভয় দেখিয়ে’ ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে করা এ মামলায় আসামি মোট ১১ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের উপসহকারী পরিচালক সজীব আহমেদ বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন। গতকাল দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এই দম্পতির বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রহমানের আদালতে এই আবেদন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের আইনজীবী মোকাররম হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী রোববার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
৫২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মামলায় জাবেদ-রুকমীলা দম্পতি ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেনÑ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সাবেক পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, আরামিট পিএলসির এজিএম উৎপল পাল, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিটের এজিএম আব্দুল আজিজ, ক্লাসিক ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিটের এজিএম জাহাঙ্গীর আলম, মডেল ট্রেডিংয়ের মালিক মিছবাহুল আলম, র্যাডিয়াস ট্রেডিংয়ের মালিক ফরিদ উদ্দিন, লুসেন্ট ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ জাহিদ, আরামিট গ্রুপের কর্মচারী নুর মোহাম্মদ ও ইয়াছিনুর রহমান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউসিবির প্রিন্সিপাল শাখা, ঢাকার গ্রাহক ও ব্যবসায়ী থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদির মোল্লাকে ‘চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মোট ৫২ কোটি টাকা ‘উৎকোচ ও ঘুষ গ্রহণ, হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর’ করা হয়। পরবর্তীতে এই অর্থ বিদেশে পাচার ও মানি লন্ডারিং করা হয়, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নথি ও তথ্য পর্যালোচনার বরাতে দুদক বলছে, ইউসিবির এ শাখায় তাদের গ্রাহক থার্মেক্স নিট ইয়ার্ন লিমিডেট ও ইনডিগো স্পিনিং লিমিটেড ২০২২ সালের ১২ জুন ঋণের আবেদন করে। সে বছর ৬ জুলাই ব্যাংকের ৪৭২তম বোর্ড সভায় ঋণ অনুমোদিত হয়। থার্মেক্স নিট ইয়ার্নের নামে অনুমোদিত ৩০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের পর ২৫ কোটি টাকা তখনকার ভূমিমন্ত্রী জাবেদের বেনামী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে র্যাডিয়াস ট্রেডিং (খাতুনগঞ্জ শাখা) ৫ কোটি টাকা, ক্লাসিক ট্রেডিং (স্টেশন রোড শাখা) ৫ কোটি টাকা, লুসেন্ট ট্রেডিং (আগ্রাবাদ শাখা) ৫ কোটি টাকা, মডেল ট্রেডিং (কারওয়ান বাজার শাখা) ৫ কোটি টাকা এবং ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং (সদরঘাট শাখা) ৫ কোটি টাকা পায়। এ ছাড়া, ২০২১ সালের ২ নভেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ইউসিবির প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক আদুরী নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ছয়টি চেকের মাধ্যমে মোট ২৭ কোটি টাকা জাবেদের বেনামী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়।
নথির বরাতে দুদক বলছে, ভূমিমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় জাবেদ নিজে ইউসিবিএল ব্যাংকের মালিক ও সাবেক পরিচালক হয়ে এবং তার স্ত্রী রুকমীলা জামানকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে রেখে, থার্মেক্স গ্রুপের এমডি আব্দুল কাদির মোল্লাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন।
সংস্থাটির দাবি, জাবেদ-রুকমীলা দম্পতি তাদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সৈয়দ কামরুজ্জামান, কোম্পানি সেক্রেটারি উৎপল পাল, কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজসহ অন্যদের মাধ্যমে কর্মচারীদের নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেন। এর মাধ্যমে থার্মেক্স নিট ইয়ার্ন থেকে ৫২ কোটি টাকা, এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ৫৫ কোটি টাকা, ওয়েল মার্ট লিমিটেড থেকে ৫ কোটি টাকা, সাইফ পাওয়াটেক লিমিটেড ও ই-ইঞ্জিনিয়ারিং পিএলসি থেকে ৪১ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা এবং আইকনএক্স সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৬০ কোটি টাকা গ্রহণ করা হয়। সব মিলিয়ে মোট ২১৩ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা উৎকোচ ও ঘুষ আদায় করা হয় তুলে ধরে মামলায় বলা হয়েছে, এর মধ্যে বর্তমান মামলায় থার্মেক্স নিট ইয়ার্ন থেকে নেওয়া ৫২ কোটি টাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদক বলছে, জাবেদ মন্ত্রী ও ইউসিবির মালিকানার প্রভাব ব্যবহার করে, তার স্ত্রী রুকমীলার মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালনা করে আব্দুল কাদির মোল্লার কাছ থেকে ৫২ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এই অর্থ তিনি তার স্ত্রী রুকমীলার পিএস রঞ্জন কুমার দাসের মাধ্যমে আদায় করেন। ওই লেনদেনে আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে খোলা ভুয়া প্রতিষ্ঠানের তথাকথিত মালিকেরা সহযোগিতা করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মো. আব্দুল আজিজ, ক্ল্যাসিক ট্রেডিংয়ের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মডেল ট্রেডিংয়ের মোহাম্মদ মিছবাহুল আলম, র্যাডিয়াস ট্রেডিংয়ের মো. ফরিদ উদ্দিন, লুসেন্ট ট্রেডিংয়ের মোহাম্মদ জাহিদ, পিয়ন নুর মোহাম্মদ ও মার্কেটিং অ্যাসিস্টেন্ট ইয়াছিনুর রহমান।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন