পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা আরও তিন মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও চারজন। গতকাল রোববার ঢাকার বিশেষ জজ-৪-এ সাক্ষ্য দেন তারা। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা হলেনÑ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী আখতার জাহান এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড কোম্পানির কর্মকর্তা ফরহাদুজ্জামান, হিমেল চন্দ্র দাস ও শেখ শমসের আলী।
আসামিরা পলাতক থাকায় সাক্ষীদের জেরা হয়নি। তাঁরা প্রত্যেকেই তিন মামলার প্রত্যেকটিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিচারক রবিউল ইসলাম আগামী ৬ অক্টোবর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন বলে জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ পিপি তরিকুল ইসলাম।
ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড কোম্পানির তিন কর্মকর্তা আদালতকে বলেছেন, শেখ রেহানা তাদের কোম্পানি থেকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন। তার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও তাদের কোম্পানি থেকে গুলশান ও বারিধারায় দুটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার আগে রাজউকে এই তিনজনই হলফনামা দাখিল করে বলেছিলেন, তাদের ঢাকা শহরে কোনো ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা জায়গা-জমি নেই। কিন্তু তাদের জায়গা-জমি, ফ্ল্যাটের জন্য ইস্টার্ন হাউজিংয়ের কর্মকর্তাদের সাক্ষী করা হয় বলে জানান দুদকের আইনজীবী।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে দুটি তারিখে আরও ১১ জন সাক্ষ্য দেন এই মামলায়। এ তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি) আসামি। এদের মধ্যে এক মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ জন; আরেক মামলায় শেখ হাসিনা, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ১৮ জন এবং অপর মামলায় শেখ হাসিনা ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ১৮ জন আসামি। তবে প্রত্যেক মামলায় শেখ হাসিনা এবং রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা আসামি। তারা পলাতক থাকায় তাঁদের অনুপস্থিতিতেই সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
গত ৩১ জুলাই একই আদালত এ তিন মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধি, ১৮৬০-এর ১৬১ / ১৬৩ / ১৬৪ / ৪০৯ / ১০৯ ধারা, তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানের পর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি দুদক এই মামলাগুলো দায়ের করে। গত ২৫ মার্চ ছয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরাসহ ২৯ জন আসামি। ইতিমধ্যে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার ছেলে-মেয়েসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বাকি তিনটি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।