আগামী শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যের নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।
অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তরের নবম শ্রেণির ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৯ কপি পাঠ্যবই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন করেনি বলে জানা গেছে।
জানুয়ারিতেই বই পাবে শিক্ষার্থীরা : ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর বই ছাপানোর কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল নভেম্বর মাসে। এবার শিক্ষার্থীরা যেন জানুয়ারি মাসেই নতুন বই পায়, সে জন্য সেপ্টেম্বর মাসে কার্যাদেশ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে বাকিগুলোও চলতি মাসের মধ্যেই দেওয়া হবে। সম্ভবত আগামী সপ্তাহেও বৈঠক হবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে ১ জানুয়ারি নতুন বই তুলে দেওয়ার কথা। তবে এসব বিষয় আরও ভালোভাবে যাচাই করার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরী বলেন, এর আগে যারা কাজ পেয়েছিল, তাদের ছাপানো বইয়ের মান কেমন ছিল, কাগজ কেমন ছিল এবং কারা একাধিক কাজ পাচ্ছে, একচেটিয়া হচ্ছে কি নাÑ এসব খতিয়ে দেখতে আরেকটু যাচাই-বাছাই করা হবে। আজ (গতকাল) বই কেনার যে প্রস্তাব ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বই নিয়ে অনিয়মের সংবাদ মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায় মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে, তাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। অনিয়মের তালিকায় কতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপানোর কাজ দেওয়া হবে এবং কবে সেই সিদ্ধান্ত হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ মাসের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
নবম শ্রেণির বই ছাপার প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি :
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে মাধ্যমিক স্তরের নবম শ্রেণির বই ছাপার বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। এা পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ প্রস্তাবটি বৈঠক থেকে প্রত্যাহার করে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার জন্য ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৯ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের একটি প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। এর জন্য ব্যয় উল্লেখ করা হয় ৪৭৯ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৭ টাকা। প্রতিটি বইয়ের দাম উল্লেখ করা হয় ৮৬ দশমিক ৪৭ টাকা।
সূত্র জানায়, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) নবম শ্রেণি, দাখিল নবম শ্রেণি, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল শ্রেণি এবং কারিগরি ট্রেড নবম ও দশম শ্রেণির বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য মোট ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৯ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের লক্ষ্যে উন্মুক্ত দরপত্র (ইজিপি) আহ্বান করা হয়। এতে ২৩৪টি দরপত্রের বিপরীতে ১৪৪টি প্রতিষ্ঠানের ৭১৮টি দরপত্র জমা পড়ে।
এর মধ্যে ৫৯৩টি দরপত্র কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপন্সিভ হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) থেকে ২২৩টি দরপত্রের রেসপন্সিভ সর্বনি¤œ দরদাতার উদ্ধৃত দর দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি ও বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় দরদাতার জামানত ১০ শতাংশ দেওয়ার সুপারিশ করে।
টিইসির সুপারিশ অনুযায়ী উল্লিখিত ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য মোট ৪৭৯ কোটি ৮২ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৭ টাকার প্রয়োজন হবে। বিষয়টি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে কমিটি তা আরও যাচাই-বাছাই করতে বলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।