চুরির অপবাদ দিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নুরুল আলম (২২) নামে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত শনিবার উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের উত্তর যাত্রাপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার নুরুল আলম ওই গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের বাবা আবুল হাসেমের সঙ্গে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে ইসমাইল মিয়া (৫৫) ও শফিক মিয়া ও বাচ্চু মিয়ার (৫৯) বিরোধ রয়েছে। এ ঘটনায় আদালতে মামলাও চলছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজন একাধিকবার সালিশ করে নিষ্পত্তির চেষ্টা করলেও ইসমাইল মিয়া ও বাচ্চু মিয়ারা তা মেনে নেয়নি। এরই মধ্যে গত শনিবার ভোরে নুরুল আলম বাড়ির পাশে একটি খালে মাছ ধরতে গেলে বাচ্চু মিয়ার আত্মীয় স্বপন মিয়া ও মো. সোহেল মিয়া তাকে জোর করে ধরে এনে আবুল হাসেম নামে অপর অভিযুক্তের বাড়ির আম গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত নুরুল আলমকে নির্যাতন করে একপর্যায়ে মসজিদের মাইকে চোর ধরেছে বলে ঘোষণা করে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা নুরুল আলমকে গাছে বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের পিতা আবুল হাসেম বলেন, আমার সঙ্গে পাশের বাড়ির ইসমাইল ও বাচ্চু মিয়াদের জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। বাচ্চু মিয়ারা প্রায় সময় আমাদের ওপর হামলা চালাত। শনিবার ভোরে আমার ছেলেকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে দিনভর লোহার রড, লাঠি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে অমানসিক নির্যাতন করেছে। পরে তারা মাইকে ঘোষণা দেয় চোর ধরেছে। এ সময় লোকজন জড়ো হলে তারা আমার ছেলেকে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সাইদ আল মুনসুর ইনাম বলেন, নুরুল আলমকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তার পায়ের তালু, হাতের তালু ও পুরো শরীরে রক্তাক্ত জখম পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন আছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমকে একটি আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মো. স্বপন ও সোহেল মিয়া লাঠি এবং লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করছে। আঘাতের যন্ত্রণা নুরুল সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও আত্মগোপনে থাকায় তাদের কারো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, নুরুল আলমকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। অভিযুক্তদের আটক করতে একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।