সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বাংলাদেশিদের জন্য দুবাইসহ বিভিন্ন আমিরাতে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর এই স্থগিতাদেশের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ভিসা পুনরায় চালুর কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। ফলে দেশটিতে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও পারিবারিক ভ্রমণের পরিকল্পনা করা লাখো বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে বাংলাদেশসহ নয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিজিট ও ওয়ার্ক ভিসায় নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে এ বিষয়ে আমিরাত সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি বা সরকারি ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আগের স্থগিতাদেশ চলমান থাকা অবস্থায় নতুন করে এমন নির্দেশনার প্রয়োজন কেন? ঢাকায় অবস্থিত সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাসের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে যে, দুবাইসহ পুরো ইউএই অঞ্চলে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যক্রম সহজে খুলছে না। দীর্ঘ এক বছর পার হলেও কূটনৈতিক পর্যায়ে নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ সমস্যার সমাধান মেলেনি। ভিসা স্থগিতাদেশের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাত। আমিরাত বহু বছর ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল। হঠাৎ করে ভিসা বন্ধ হওয়ায় হাজারো শ্রমিক বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ও ভিসাপ্রত্যাশীরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে এখন অপেক্ষায় আছেন কবে ভিসা খুলবে, কোনো নিশ্চয়তা নেই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জেয়ৌদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং আরও বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার আহ্বান জানান। এরপরও পরিস্থিতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ঢাকাস্থ ইউএই দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তবে এ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউএই-তে শ্রমবাজারে কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি পরিবর্তন, অভিবাসন নিরাপত্তা ও শ্রমবাজার সুরক্ষার দিক বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রেমিট্যান্স উৎস ছিল। এখন সেই প্রবাহে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ভিসা স্থগিতাদেশ দীর্ঘায়িত হওয়ায় অনেক পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও রোগীরা যারা চিকিৎসা বা পড়াশোনার জন্য দুবাই যেতে চেয়েছিলেন, তারাও পড়েছেন অনিশ্চয়তার মুখে। বিশেষ করে
ভিসা এজেন্সিগুলোর মধ্যে উদ্বেগ
দেখা দিয়েছে, কারণ তারা দীর্ঘদিন
ধরে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। এটি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে হাজারো মানুষের জীবিকার প্রশ্ন। আমিরাতের স্বপ্ন থমকে গেছে অনিশ্চয়তার দেয়ালে।