ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

বিসিবি নির্বাচন

আমার একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট: বুলবুল

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০২:০৩ এএম

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে প্রায় চার মাসের গতকাল শেষ দিন ছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। সাবেক এই অধিনায়ক ক্রিকেট বোর্ডে এসেছিলেন ‘একটা কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস’ খেলার জন্য। তার সেই ইনিংস এখন অনেক দীর্ঘায়িত হওয়ার পথে। আজ বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে আবার সভাপতি হতে যাচ্ছেন বুলবুল। যদিও বিসিবি নির্বাচন ঘিরে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সমর্থন বুলবুল পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগ স্বীকার করছেন না বুলবুল। দেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আবার নতুন করে বোর্ডে আসার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।
বিসিবি সভাপতি হিসেবে শেষ দিন মিরপুরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন বুলবুল। সেখানে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার কাছে (সরকারের) প্রভাব কিছু মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার (বিসিবিতে) চালিয়ে যাওয়া দরকার। আমাকে যারা ভোট দিচ্ছেন বা ভোট দেবেন না অথবা আপনারা (সাংবাদিক) যারা আছেন, যদি মনে করেন আমি যথেষ্ট ভালো না, আমি চলে যেতে আগ্রহী আছি যেকোনো সময়। একই সঙ্গে এটাও বলতে চাই, আমার একটাই লক্ষ্যÑ বাংলাদেশ ক্রিকেট।’ ক্রীড়া উপদেষ্টা তাকে সভাপতি হিসেবে থাকতে বলেননি বলেও দাবি করেছেন আমিনুল। তিনি বলেন, ‘গত মেয়াদে ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাকে ধন্যবাদ দিতে চাইÑ তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদার মানুষ। আপনি বলছিলেন বয়কটকারীদের কথা। আমি নিজে জানি, তিনি রাত-দিন কাজ করেছেন শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, একটি ভালো বোর্ড গঠনের জন্যও।’ সরকারি হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ক্লাব ও বিভাগ থেকে প্রার্থী হওয়া এক পক্ষ। তাদের মধ্যে আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও। নির্বাচন পিছিয়ে না দিলে ৪৮টি ক্লাব কোনো ধরনের ক্রিকেটে অংশ নেবে না। এ প্রসঙ্গে বুলবুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে ক্লাবের বিকল্প নেই। ক্রিকেটে তাদের অবিশ^াস্য অবদান আছে। তাদের ভূমিকা, প্রয়োজনীয়তা, অবদানÑ সবকিছুই আমরা তুলে ধরব। চেষ্টা করব তাদের ম্যানেজ করতে। ঘুরেফিরে আমরা তো একই সমাজের মানুষ, হয়তো পারব।’ ক্লাবগুলো ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতা সমাধানের আশ^াস দিয়েছেন তিনি। চার মাস দায়িত্ব পালনের সময় বিসিবিকে ‘দল’ হিসেবে চালাতে পারাটাকেই নিজের সাফল্য মনে করেন আমিনুল। ব্যর্থতা হিসেবে বলেছেন যোগাযোগের ঘাটতির কথা। আমিনুল বলেন, ‘ওখানে (মাঠে) তো একটা টেকনিক থাকে। আপনি একটার বেশি বাউন্সার দিতে পারবেন না, নো বল করতে পারবেন না। এখানে অনেক নো বল হয়ে গেছে।’
এদিকে, গতকাল আবার নির্বাচনে ফিরেছে বিতর্কিত ওই ১৫টি ক্লাব। সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ যে রিট আবেদন করেছিলেন, ওই রিট আবেদনের রুল স্থগিত করে দিয়েছে হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালত। ১৫ ক্লাবের পক্ষে আপিল আবেদন করেন নাখালপাড়া ক্রিকেটার্সের কাউন্সিলর লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। একই দিন বিসিবি নির্বাচন বন্ধের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দ্বারস্থ হন ঢাকার ক্রিকেট সংগঠকেরা। গতকাল ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিল রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। সেখানে চলমান সংকট কাটাতে তিনটি পরামর্শ হিসেবে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন সংগঠকেরা। তাদের দাবি, বিসিবির বর্তমান নির্বাহী পর্ষদের সময় বাড়িয়ে নির্বাচনের পুনঃতপশিলসহ কাউন্সিলরশিপ বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, বিকল্প হিসেবে অ্যাডহক কমিটির কাছে দায়িত্ব দেওয়া এবং পুনর্নির্ধারিত সময়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভোট গ্রহণ করা। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে সংগঠকেরা জানিয়েছেন, কাউন্সিলরশিপের ব্যাপারে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ হস্তক্ষেপ করে পুরো বিষয়টিকে বিতর্কিত করেছে। ১৫টি ক্রিকেট ক্লাবকে প্রথমে অনুমতি প্রদানের পরও বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চারদিক ঘিরে থাকা স্বার্থান্বেষীদের চাওয়াতেই নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগের দিন তাদের আবেদন বাতিল করে। এর আগে বিষয়গুলোর সুষ্ঠু সমাধান ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ক্লাব সংগঠক ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও ফলপ্রসূ হয়নি। তাই ক্লাব সংগঠকেরা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিকে বিসিবির নির্বাহী পর্ষদে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া চেষ্টা চলছে, যা গঠনতন্ত্র ৯ ও ১০ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অবদান ঢাকার প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্লাবগুলোর। ক্লাব সংগঠকেরা টুর্নামেন্টগুলো চালাতে বাৎসরিক অন্তত শতকোটি টাকা খরচ করে থাকে। বিনিময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ক্রিকেটে অবদান রাখতে চান তারা। সেই রাস্তাটাই এবার রুদ্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ঢাকার ক্লাবগুলো উপায় না দেখে আসন্ন টুর্নামেন্টগুলো থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে সক্রিয়ভাবে।’
অপরদিকে, নির্বাচনে থাকা প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ জোরেশোরে। গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ সেজেছে বড় বড় সব পোস্টারে। বিসিবিতে নির্বাচনি আবহ বোঝাতেই প্রার্থীদের এই আয়োজন। বিসিবির অফিস ভবনের দেয়ালে বড় করে সব প্রার্থীর ছবি টানানো হয়েছে। যেখানে ফারুক আহমেদ, ইসতিয়াক সাদেকসহ অন্য প্রার্থীদের ছবি রয়েছে। এদিকে, নির্বাচনের একেবারে সন্নিকটে থাকলেও যেমন আমেজ থাকার কথা, সেরকমটা নেই বিসিবিতে। কারণ বিসিবির নির্বাচন থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী।