ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব সিসি ক্যামেরা উধাও

কক্সবাজার ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১১:২৯ পিএম

* কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলায় নিরাপত্তাসংকট

কক্সবাজারের উখিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির আবারও আলোচনায়। ৩৩টি ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। কিন্তু এখন এই ক্যাম্পগুলো পড়েছে নিরাপত্তাঝুঁকির মুখে। নজরদারি জোরদারের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল প্রায় ৭০০টি সিসি ক্যামেরা, যা একে একে অচল হয়ে গেছে বা উধাও হয়ে গেছে সম্পূর্ণভাবে। শুধু তা-ই নয়, কিছু ক্যাম্পে কেটে ফেলা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়াও। এতে বাইরের অপরাধীচক্রের চলাচল সহজ হয়ে পড়েছে, আর ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ রোহিঙ্গা ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার ত্রাণকর্মীরাও।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের নির্যাতন থেকে প্রাণ রক্ষায় পালিয়ে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। আট বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। উখিয়ার ৮ হাজার একর বনভূমিতে গড়ে ওঠা ৩৩টি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে রাখতে তখন নির্মিত হয় কাঁটাতারের বেড়াও। এ ছাড়া ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে ও নজরদারিতে স্থাপন করা হয়েছিল সাত শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।

ক্যাম্পে স্থাপিত ৭০০ সিসিটিভির একটিও বর্তমানে সচল নেই। হাওয়া হয়ে গেছে বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা। এতে পুরো ক্যাম্পজুড়ে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, প্রতিদিনই হাজারো মানুষ চলাচল করছে এসব ক্যাম্পে। অপরাধ দমনে যেসব সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দিনরাত পর্যবেক্ষণ করা হতো, এখন সেগুলোই অচল। তাদের মতে, এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের মূল কারণ মাদক ও অস্ত্রের কারবার।

উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্প তার ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই এসব ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চলছে বলে তার ধারণা। ক্যাম্পে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

ক্যাম্পে অবস্থানরত এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সিসি ক্যামেরা চুরির পেছনে সংগঠিত চক্র থাকতে পারে, যারা ক্যাম্পের অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর গতিবিধি গোপন রাখতে চায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এপিবিএন আরও জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। যারা ক্যামেরা সরিয়ে ফেলেছে বা কাঁটাতার কেটেছে, তাদের শনাক্তে কাজ চলছে।

এদিকে এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, নিরাপত্তার এমন ভাঙন হলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে। তাদের মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নড়বড়ে হয়ে পড়ায় নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয়দের মধ্যে। সিসি ক্যামেরা স্থাপনে কোটি টাকার প্রকল্প হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির ঘাটতিই এখন বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

নিরাপত্তাহীনতার এই পরিস্থিতিতে নতুন করে নজরদারি ব্যবস্থা চালু না করলে, যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের অঘটনÑ এমনটাই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।