ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

বিতর্কের মধ্যেই বিসিবির ‘নাটকীয়’ নির্বাচন আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর যে আবহ তৈরি হয়েছিল, সেটি দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তৈরি হয় সমালোচনা, বিতর্ক এবং অভিযোগ ও নানা প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ এবারের ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন। তামিম ইকবালসহ ক্লাব ক্রিকেটের বড় একটি অংশ না থাকায় নেই নির্বাচনি উত্তাপ-উত্তেজনা, আমেজহীন ক্রিকেটাঙ্গন। এর মধ্যেই নাটকীয়তা ভরা বিসিবি নির্বাচন হচ্ছে আজ। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হবে বিসিবি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এতে ভোট দেবেন ১৫৬ কাউন্সিলর। এ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ২০ পরিচালক প্রার্থী। ফলে অবশিষ্ট ২৮ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়বেন। এরই মধ্যে বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদীন ফাহিমসহ মোট ৮ পরিচালক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বিসিবি নির্বাচন ঘিরে কদিন ধরে একের পর এক যে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে, তারপরও নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আর কোনো আইনগত বাধা নেই। গতকাল হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালত দুটি রায় দিয়েছেন। একটি হলোÑ কাউন্সিলর মনোনয়নের ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, সেটিই বহাল থাকছে। অপরটি হলোÑ সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ যে ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেছিলেন, ওই রিট আবেদনের রুল স্থগিত করে দিয়েছেন চেম্বার জজ আদালত। অর্থাৎ বিসিবি নির্বাচনে আবার ফিরেছে ১৫ ক্লাব, ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে তারা। এই ক্লাবগুলোর পক্ষে আপিল আবেদন করেন নাখালপাড়া ক্রিকেটার্সের কাউন্সিলর লোকমান হোসেন ভূঁইয়া।

মহানাটকীয়তায় ভরা বিসিবি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে থেকেই বিসিবি নির্বাচন প্রশ্ন, বিতর্ক ও সন্দেহ উগড়ে দিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে থাকা বিতর্কিত ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলর ছাড়াই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটাধিকার ফিরে পায় আলোচিত ১৫টি ক্লাব। এরপর মনোনয়নপত্র ঘিরে ঘটে তুলকালাম। সরকারপন্থি ও বিএনপিপন্থি প্রার্থীরা যে সমঝোতার পথ ধরে হাঁটছিল, সেটি সফলতার মুখ দেখেনি। ভেস্তে যায় সমঝোতার প্রস্তাব। ক্লাব কোটায় নির্বাচনে পূর্ণ ১২ জন প্রার্থী দাঁড় করানোর ঘোষণা দেয় তামিম ইকবাল খানের প্যানেল। এরপরই ১৫ ক্লাব নিয়ে দাবার বড় ‘চাল’ দেন বিসিবি সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ। পূজার ছুটির আগের দিন ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি। হাইকোর্ট ১৫টি ক্লাবের নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

বিপাকে পড়ে যায় তামিম প্যানেল। কেননা যে ১৫টি ক্লাবের ওপর নির্বাচনের অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসে, প্রায় সব ভোটই তামিমদের ছিল। সরকারি হস্তক্ষেপ আর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে প্রতিবাদস্বরূপ তামিমসহ ১৬ পরিচালক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে খেলা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। সামনে আসে নাটকের নতুন নতুন পর্ব। নির্বাচনে কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচন বলে লুৎফুর রহমান বাদল ও হাসিবুল আলমও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। খবর ছড়িয়েছে, এক দিন আগেই গত শুক্রবার রাতেই রাজধানীর একটি হোটেলে ই-মেইলের মাধ্যমে বিসিবির নির্বাচন হয়ে গেছে! যেখানে পোস্টাল বা ই-ব্যালটে ভোট দিয়েছেন কাউন্সিলররা।

এ নিয়ে রহস্য ছড়াচ্ছে। একই দিন নীলনকশার নির্বাচন বাতিল চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকার ক্লাব সংগঠকরা। তারা তিন দাবি উপস্থাপন করেন। নির্বাচন পেছানো, অ্যাডহক কমিটি গঠন ও নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করার। এসব দাবি না মানলে আগামী মৌসুমে লিগ বর্জনের হুমকি দেয় ক্লাবগুলো। এর আগে বিষয়গুলো ক্রীড়া উপদেষ্টার দৃষ্টিগোচর করেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারীরা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।

এসব ঘটনার পর গতকাল নির্বাচনের আগে আরও বেশি নাটকীয়তার জন্ম হয়। এ দিন আবার নির্বাচনে ফিরেছে বিতর্কিত ওই ১৫টি ক্লাব। একই দিন বিসিবি নির্বাচন বন্ধের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দ্বারস্থ হন ঢাকার ক্রিকেট সংগঠকরা। গতকাল ইন্দিরা রোড ক্রীড়াচক্রের কাউন্সিল রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এতে নির্বাচন স্থগিত ও নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানানো হয়। একই দিন ঢাকা বিভাগ থেকে পরিচালক প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে ঢাকা বিভাগ থেকে অপর দুই প্রার্থী বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের পথ সুগম হয়। এতকিছুর মধ্যে ক্রিকেট বোর্ডে ব্যানার-পোস্টার টাঙিয়ে নির্বাচনি আবহ তৈরি করেছেন সরকারপন্থি প্রার্থীরা।

গত বছর সরকারের পট পরিবর্তনের পর সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গা ঢাকা দেন। এরপর থেকে ক্রিকেট বোর্ড চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। পাপনের জায়গায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ফারুক আহমেদ বিতর্কিত হয়েছেন। এবার সভাপতি আমিনুল ইসলামও বিতর্কিত হচ্ছেন। তবে সব বিতর্ক ছাপিয়ে যাচ্ছে বিসিবি নির্বাচন। মহাবিতর্ক, নাটকীয়তা আর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ক্রিকেটে নতুন নেতৃত্ব আসবে আজ। গতকাল বিসিবি কার্যালয়ের সামনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ‘রাতের ভোট’কেও হার মানিয়েছে এবারের বিসিবি নির্বাচন।

তিনি বলেন, ‘রাতের ভোট তো... তবু তো ওরা ব্যালট বাক্স ভরেছে, সেটা আলাদা জিনিস। এরা তো সুকৌশলে এমন কাজ করছে, সেটা (রাতের) ব্যালট বাক্সকেও হার মানিয়ে ফেলছে।’ এর আগে বিসিবি নির্বাচন পাতানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তামিম ইকবাল। বিসিবির নির্বাচনকে নীল নকশার নির্বাচন বলে দাবি করেন ঢাকার ক্রিকেটার সংগঠকরা।