নিরপেক্ষতার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে অতিসত্বর তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় চলে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সেইসঙ্গে বিতর্কিত ব্যক্তিদের সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। আমীর খসরু বলেছেন, যেহেতু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই দায়িত্ব পালন করবে আগামী নির্বাচনে, যেহেতু আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না নির্বাচনের আগে, সে জন্য এই সরকারকে অতিসত্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আমীর খসরু। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অতিসত্বর সরকারকে কেয়ারটেকার মুডে চলে যেতে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের জায়গায় অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, পুরোপুরি নিরপেক্ষ অবস্থানে যাওয়ার কথা বলছি।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা লক্ষ করেছি, অনেক পদায়ন, অনেক বদলি, অনেক বিষয়ে সরকারের অবস্থান যে, কিছু কিছু লোক এগুলোকে প্রভাবিত করছে। সে জন্য আমরা বলেছি, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে অথবা যারা কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে কিংবা দলের সঙ্গে নিজেদের আইডেনটিফাই করেছে, তারা সরকারে থাকলে কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকা পালন করতে পারবে না।
আমীর খসরু আরও বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের যে চরিত্র, সেটা সংবিধানে বলা আছে, কেয়ারটেকার সরকার কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটাও সংবিধানে বলা আছে পরিষ্কারভাবে। সুতরাং, এই সরকারকে এই মুহূর্ত থেকে সংবিধানে যে কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকা দেওয়া আছে, সেই বৈশিষ্ট্য তাদের এখন থেকে করতে হবে তাদের সব কর্মকা-ে।
নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চেষ্টা হচ্ছে, এগুলো তো ঠিক না। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যাওয়ার তো দিন শেষ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হয়েছে। এখন যাবেন জনগণের কাছে। আপনার দলের যদি কোনো কিছু আপনি মনে করেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য, আপনার যত দাবি-দাওয়া আছে, সব নিয়ে আগামী নির্বাচনে আপনার মেনিফেস্টো নিয়ে জনগণের কাছে যান।’
বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল চায় উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা চাই, একটা শান্তিপূর্ণ ট্রানজিশন হোক। তাহলে যারা সরকারে আছেন, উনাদের তো সম্মানের সঙ্গে যেতে হবে, আমরা সেটা তো চাই। কিন্তু কিছু লোকের কার্যকলাপের মাধ্যমে সেটা যদি বিঘিœত হয়, সেজন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলেছি, আপনারা পুরোপুরি কেয়ারটেকার মুডে চলে যান।’ তিনি আরও বলেন, যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে, সেই লোকগুলোকে চলে যেতে হবে। তারা থাকলে তো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সবার কাছে মেসেজ যাবে, ক্লিয়ার মেসেজ যাবে যে, অন্তর্বর্তী সরকার তার সঠিক নিরপেক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, প্রয়াত মশিউর রহমান জাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ হোসেন আলমগীর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন