দীর্ঘ নীরবতার পর আবারও আলোচনায় এলেন ঢাকাই সিনেমার বহুল বিতর্কিত চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। অদৃশ্য জাদুর কাঠির ইশারায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। অভিনয়ের চেয়ে শিল্পী সমিতির রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেই বেশি আলোচনায় এসেছেন এই নায়িকা। নির্বাচনি সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত নানা বিতর্ক, আদালতের মামলা, এমনকি বহিষ্কারাদেশ পর্যন্ত সবকিছু মিলিয়ে তার নামটি প্রায়ই শিরোনামে থেকেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে নিপুণ অনেকটাই অন্তরালে চলে যান। মাঝখানে যুক্তরাজ্য যাওয়ার চেষ্টাকালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আলোচনায় আসেন। এরপর ফের নীরব হয়ে যান এই অভিনেত্রী। অবশেষে দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে দেখা গেল জুলাই আন্দোলনে বিপক্ষে নেওয়া হত্যা মামলার আসামি নায়িকা নিপুণকে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার চলচ্চিত্র অভিনেতা নানা শাহর ছেলের বিয়ের আসরে নিপুণকে দেখা যায়। সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও ও ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, চিত্রনায়িকা রোজিনা ও পলির সঙ্গে কোলাকুলি করছেন নিপুণ। হত্যা মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যে ঘুরছেন পতিত আওয়ামী সরকারের দোসর নিপুণ। নিয়মিত তার যাতায়াত রয়েছে বনানী ১১ নম্বর রোডে অবস্থিত স্পা সেন্টারেও।
জানা গেছে, আসন্ন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি নিপুণের পার্লারে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এক চিত্রনায়ক গোপন মিটিং সেরেছেন। সেখানে এই নায়ক-নায়িকা ছাড়াও গত দুই মেয়াদে মামলা সমর্থন করে শিল্পী সমিতি বিতর্কিত করা এক প্রযোজক-পরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন এক বাস কোম্পানির মালিক। ওই চিত্রনায়ক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হতে আগ্রহী হলেও নিপুণের পক্ষ থেকে প্রস্তাব তারই ঘনিষ্ঠ আরেক চিত্রনায়িকা পলিকে একই পদে রাখার। এরই মধ্যে সেই মিটিংয়ে একটি সম্ভাব্য প্যানেলও চূড়ান্ত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর ভাটার থানাধীন এলাকায় হওয়া এক হত্যাচেষ্টা মামলায় নিপুণ আক্তার ১৭ অভিনয় শিল্পীর মধ্যে অন্যতম আসামি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে খবর।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিপুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের কোনো সংস্থা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। গত দেড় দশকে স্বৈরাচারের দোসর ও শেখ সেলিমের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিএফডিসিতে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। অবৈধভাবে শিল্পী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। তারপরও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরছেন।
নিপুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। রাজউকে তদবির বাণিজ্য, শেখ সেলিমের সহযোগিতায় বিভিন্ন পুলিশ নিয়োগ ও বদলি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পিকনিক ও ইফতারের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠান ভাগাভাগি, এফডিসির বহুতল ভবন থেকে কমিশন, চলচ্চিত্র দিবস পালনের নামে বড় অঙ্কের টাকা লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে।
এ ছাড়াও মুনাফার ১০ শতাংশ প্রদানের শর্তে হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে পুরো ইন্ডাস্ট্রির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন নিপুণ। তার বিরুদ্ধে প্রাক্তন স্বামীরও পাহাড়সম অভিযোগ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রকাশ্যে এসেছে। নিপুণ তাকে সবসময় শেখ সেলিমের ভয় দেখাতেন বলে গণমাধ্যমে জানান তিনি।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে পরাজিত হয়েও নিপুণ আদালতে মামলা করে বিজয়ী প্রার্থী জায়েদ খানকে চেয়ারে বসতে দেননি। এ ছাড়াও আদালতের স্থিতিতাদেশ অমান্য করে তিনি সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার দখল করে ছিলেন। এ থেকে অনুমান করা যায়, তৎকালীন সরকারের একজন প্রভাবশালী অভিনেত্রী ছিলেন নিপুণ।
তবে পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয় নিপুণ আক্তারকে। এ বছরের শুরুতেই সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে সময় নিপুণকে ‘সাবধান’ করে শিল্পী সমিতির সহসভাপতি ডিএ তায়েব বলেছিলেন, নায়িকার বিরুদ্ধে ৬৪ জেলায় মানহানির মামলা করবেন তিনি ও তার ভক্তরা। মামলার ভয় দেখিয়ে আলোচনায় থাকতে চাওয়া সেই তায়েবকেও নিপুণের সঙ্গে সেলফি নিতে দেখা গেছে অনুষ্ঠানে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন