মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০১:৩১ এএম

জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের পরিচালক

দেশে বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসায় বাধা জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০১:৩১ এএম

দেশে বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসায় বাধা জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট

** ১৪ কোটি টাকায় ক্যানসার হাসপাতালে কী ঢুকলÑ জানতে চাইলেন উপদেষ্টা

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেছেন, ‘দেশে এখন এমন সক্ষমতা গড়ে উঠছে যে অধিকাংশ ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও আমাদের জনবলের সংকট, যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তবু চিকিৎসা ও সেবার মান উন্নয়নে কাজ চলছে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘দেশে ক্যানসার চিকিৎসার মূল সমস্যা টাকার অভাব নয়, বরং সিস্টেমের মধ্যে থাকা গলদ, দুর্নীতি আর অপচয়। ক্যানসার হাসপাতালে একই মানের দুটি চিকিৎসাযন্ত্রের দামে ১৪ কোটি টাকার পার্থক্য কেন? এই বাড়তি টাকায় হাসপাতালে কী ঢুকল?’

গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, বাংলাদেশ ক্যানসার প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর ক্যানসার রিসার্চের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। গ্লোবাল ক্যানসার অ্যাটলাস অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি বিশ্বাস করি না, কারণ এখনো দেশে অপারেশন-ভিত্তিক কোনো জাতীয় ক্যানসার রেজিস্ট্রি নেই।’ তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার সবচেয়ে বেশি আর নারীদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসার শীর্ষে রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে আরও কয়েকটি ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো চালু হলে মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। বর্তমানে দূর-দূরান্ত, এমনকি কনস্পারা অঞ্চল থেকেও রোগীরা ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসে এবং চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তাদের কষ্ট শুরু হয়।

চিকিৎসার মান, জনবলের সংকট ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি: অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘শুধু ভবন বা অবকাঠামো করলেই হবে না; যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল ছাড়া উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ৩০০ জনবল দিয়ে প্রায় ৫০০ রোগীর চিকিৎসা চলছে। ২০২১ সাল থেকে আমরা জনবল বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। সম্প্রতি সেই ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অনুমোদন পেলে সার্ভিস আরও উন্নত হবে।’ তবে তিনি আশাবাদী কণ্ঠে যোগ করেন, ‘আল্লাহর রহমতে আধুনিক বিশ্বমানের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই আছে। যদিও কিছু যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে, তবু আমরা ইতিমধ্যে দুটি নতুন মেশিন চালু করেছি। আরও দুটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদি আটটি রেডিওথেরাপি ইউনিট চালু করা যায়, তাহলে ক্যানসার রোগীদের কষ্ট অনেকটা কমে যাবে। যেহেতু বাংলাদেশ একটি লো রিসোর্স দেশ, তাই প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এ জন্যই সারা বিশ্বে স্ক্রিনিং ও সচেতনতা মাস পালন করা হয়। ক্যানসারকে যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায়, তাহলে চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু অ্যাডভান্স স্টেজে এলেই চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এখন সব পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। আগে সিটি স্ক্যান ছিল না, গতকাল থেকে তা চালু হয়েছে। এ বছরই ইনশাআল্লাহ একটি এমআরআই মেশিনও চালু হবে। ফলে পরীক্ষার জন্য রোগীদের আর বাইরে যেতে হবে না।’

কেমোথেরাপি সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে কেমোথেরাপি সম্পূর্ণ ফ্রি দেওয়া হয়। কখনো ওষুধ শেষ হয়ে গেলে রোগীদের কিছুটা কিনতে হয়, তবে সার্ভিসটি বিনা মূল্যেই দেওয়া হয়। সরকার বিপুল পরিমাণ সম্পদ চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে দিয়েছে, আরও দিচ্ছে। এতে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ক্যানসার চিকিৎসায় মেশিন ক্রয় প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘একটি মেশিনের দাম ২৪ কোটি, অন্যটির ৩৮ কোটি টাকাÑ মান প্রায় একই, কিন্তু দামের পার্থক্য ১৪ কোটি কেন? কারণ সিস্টেমে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, যা বাস্তবে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাবতে হবে, এই সিস্টেম থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ এই সিস্টেমটাই রোগীর চিকিৎসা বিলম্বিত করছে, জনগণের টাকা নষ্ট করছে।’ তার মতে, ‘সরকারি খাতে যন্ত্রপাতি কেনা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়মগুলো এমনভাবে তৈরি যে, আসল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি টাকা ব্যয় হয়, অথচ সেবার মান তাতে বাড়ে না। যেই অপচয়টা আমরা করছি, সেটা যদি আমি আমার রোগীর পেছনে খরচ করতে পারি, তাতেই হবে আসল উন্নয়ন।’ নূরজাহান বেগম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা প্রিভেনশন থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার বাজেট কমে যাচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই শুরু করতে হলে আগে থেকেই মানুষকে সচেতন করতে হবে। ক্যানসার এক দিনে হয় না; বছরের পর বছর তামাকের সংস্পর্শে, অস্বাস্থ্যকর খাবারে, জীবনযাপনে তৈরি হয়। স্কুলের মেয়েদের যদি এই শিক্ষা দেওয়া যেত, তাহলে তারা ঘরে গিয়ে মাকে, দাদিকে বলত। এতে রোগ আগেভাগে ধরা পড়ত।

নূরজাহান বেগম বলেন, একজন রোগী চিকিৎসার জন্য ২৬ হাজার টাকা খরচ করে, যার বেশির ভাগই ধার করা টাকা। তিনি হাসপাতালের বিশৃঙ্খল পরিবেশ নিয়ে বলেন, অনেক রোগী ভর্তি হতে না পেরে তিন দিন বারান্দায় ঘুমায়। কেউ রাস্তায় রাত কাটায়। অন্তত তাদের জন্য একটু জায়গা, একটু শৃঙ্খলার ব্যবস্থা থাকা উচিত। তিনি বলেন, রোগীর সঙ্গে অতিরিক্ত এটেনডেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিনিধিদের অবাধ প্রবেশ হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করছে। হাসপাতালের ইনডোরে ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না এমন ব্যবস্থা করা দরকার। সরকারি ক্রয়নীতির জটিলতা নিয়ে তিনি বলেন, প্রাইভেট সেক্টর ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে সরাসরি যন্ত্রপাতি কিনে আনতে পারে, সরকার কেন পারে না? নতুন নতুন নীতিমালা (পিপিআর) যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু জটিলতা কমছে না। তার মতে, এই সিস্টেমে যত নতুন ধারা যোগ হয়, জনগণ ততই ‘স্পৃষ্ট’ হয়। নূরজাহান বেগম জানান, ক্যানসার চিকিৎসায় আসল বাধা অর্থ নয়, বরং বাধা দুর্নীতি আর জটিল সিস্টেম।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবির।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!