মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

নেপোলিয়নের গ্র্যান্ড আর্মি ধ্বংস নিয়ে নতুন তথ্য

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

নেপোলিয়নের গ্র্যান্ড আর্মি  ধ্বংস নিয়ে নতুন তথ্য

১৮১২ সালের কথা। ৫-৬ লাখ সৈন্যবাহিনী নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিলেন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। মস্কোয় পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পিছু হটতে হয়েছিল, যার অন্যতম কারণ ছিল তার সৈন্যদের অসুস্থতা। এত দিন পর্যন্ত জানা ছিল, এই অসুস্থতার নেপথ্যে রয়েছে টাইফাস মহামারির সংক্রমণ। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাল, শুধু টাইফাসই নয়, আরও বেশ কিছু রোগ কাবু করেছিল ফরাসি সম্রাটের গ্র্যান্ড আর্মিকে।

নেপোলিয়ন তার গ্র্যান্ড আর্মি নিয়ে ১৮১২ সালের জুন মাসে সোভিয়েত আক্রমণ করেন। তারা তখন সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে পিছু হটতে থাকে। পিছিয়ে যেতে যেতে পথে নিজেদের সব গ্রাম ও চাষের জমি পুড়িয়ে দিতে দিতে যায় তারা। সোভিয়েত ইউনিয়নের এই কৌশলী চালে নেপোলিয়নের বাহিনী যখন মস্কোয় পৌঁছায়, তখন তাদের কাছে খাবারের অভাব দেখা দেয়। সঙ্গে প্রবল শীতও কাবু করতে থাকে তাদের। এরই মধ্যে রোগের সংক্রমণেও বাহিনী দুর্বল হয়ে যায়। সব মিলিয়ে রুশ অভিযানের সময় নেপোলিয়নের প্রায় ৩ লাখ সৈন্য ক্ষুধা, শীত ও রোগের কারণে মারা যায়।

এত দিন পর্যন্ত ধরে নেওয়া হতো, টাইফাস মহামারির কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল নেপোলিয়নের বাহিনী। রাশিয়া অভিযান থেকে পিছু হটার সময় ইউরোপের লিথুয়ানিয়ার ভিলনিউসে গ্র্যান্ড আর্মির মৃত সৈন্যদের কবর দেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালে ওই গণকবর আবিষ্কৃত হয়। তার পরে ২০০৬ সালের এক গবেষণায় ২১৩ বছরের পুরোনো ওই টাইফাস-বৃত্তান্ত সম্পর্কে প্রথম জানা যায়। সৈন্যদের কিছু কঙ্কালের দাঁত বিশ্লেষণ করে দেখেন বিজ্ঞানীরা। ওই সব নমুনা থেকে জানা যায়, সৈন্যদের ‘রিকেটসিয়া প্রোয়াজেকি’ নামে এক ব্যাকটেরিয়ার (যা থেকে টাইফাস রোগ হয়) সংক্রমণ হয়েছিল। তবে প্রযুক্তিগত কারণে ওই সময় গবেষণা নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, নেপোলিয়নের সৈন্যদের কাবু করেছিল আরও অন্তত দুটি রোগ।

সম্প্রতি জীববিদ্যাসংক্রান্ত সাময়িকী কারেন্ট বায়োলজিতে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ওই একই এলাকার কবর খুঁড়ে পাওয়া আরও কিছু কঙ্কালের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রেও কঙ্কালগুলোর দাঁত বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। তাতে ‘সালমোনেলা এনটেরিকা’ ও ‘বোরেলিয়া রেকারেনটিস’ নামে আরও দুটি ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মেলে। এগুলোর কারণে ‘প্যারাটাইফয়েড’ এবং ‘রিল্যাপসিং ফিভার’ (বারবার জ¦র ফিরে আসা) দেখা যায় রোগীর শরীরে। এ দুই ব্যাকটেরিয়ার বিষয়ে ২০০৬ সালের গবেষণায় পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, এখন আর বলা যাবে না শুধু টাইফাসের মহামারির জেরেই নেপোলিয়নের সেনা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাদের অসুস্থতার নেপথ্যে রয়েছে আরও বেশ কিছু রোগ।

নতুন গবেষণায় পাওয়া এ দুই ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি আরও অন্য জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ নতুন গবেষণাটি করা হয়েছে মাত্র ১৩টি কঙ্কালের নমুনা নিয়ে। সে ক্ষেত্রে অন্য কঙ্কালগুলোর দাঁতের নমুনা থেকে অন্য কোনো সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকেরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ১৩টি নমুনার মধ্যে টাইফাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।

এই গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন এস্তোনিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অব তারতু’র গবেষক রেমি বারবেরি। আগে তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে ‘পাস্তুর ইনস্টিটিউট’-এর গবেষক ছিলেন। তার কথায়, ‘এত দিন আমরা ভাবতাম যে নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনীকে ধ্বংস করেছিল শুধু একটিই সংক্রামক রোগÑ টাইফাস। তবে নতুন গবেষণায় একেবারে অপ্রত্যাশিত কিছু পাওয়া গেছে। সৈন্যবাহিনী ধ্বংসের নেপথ্যে আরও সংক্রামক রোগের যোগ থাকার সম্ভাবনার দিকে খুলে দিয়েছে এই গবেষণা।’

২০০৬ সালের গবেষণায় প্রযুক্তিগত কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। ফলে ওই সময়ে ‘রিকেটসিয়া প্রোয়াজেকি’ ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা গেলেও গবেষণা আর বেশি দূর এগোনো যায়নি। পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার ধরনে বদল আসে। সম্প্রতি গবেষকেরা ‘হাই-থ্রুপুট সিকোয়েন্সিং’ নামে একটি পদ্ধতিতে মৃত সৈন্যদের কঙ্কাল থেকে পাওয়া দাঁতের নমুনা পরীক্ষা করেন। এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে লক্ষাধিক ডিএনএর নমুনা বিশ্লেষণ করা যায়। ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো ডিএনএর নমুনা বিশ্লেষণ করা যায় এই পদ্ধতিতে। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য তথা ‘পাস্তুর ইনস্টিটিউটের’ মাইক্রোবিয়াল প্যালিওজেনোমিকস শাখার প্রধান নিকোলাস রাসকোভানের কথায়, ‘নেপোলিয়নের সেনাবহরে যে বেশ কয়েকটি সংক্রামক রোগ ছিল, তা আমাদের এই গবেষণা থেকে স্পষ্ট।’

তবে নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর ওপর এই রোগগুলোর প্রভাব কতটা ছিল, তা জানতে গেলে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন রাসকোভান। কারণ, এই গবেষণায় মাত্র ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বস্তুত, ‘প্যারাটাইফয়েড’ বা ‘রিল্যাপসিং ফিভার’ বর্তমানে খুব বেশি দেখা যায় না। এগুলো এখন আর ততটা মারাত্মকও নয়। তবে ১৮১২ সালে তার সৈন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়ার জেরে ‘গ্রেট আর্মি’র সিংহভাগই ধ্বংস হয়ে যায়। বাকি সৈন্যবাহিনীও দুর্বল হয়ে পড়ে। তার কয়েক বছর পরে ১৮১৫ সালে ওয়াটারলুর যুদ্ধে পতন হয় নেপোলিয়নের।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!