গাজীপুরের টঙ্গীর আলোচিত খতিব মুফতি মোহেববুল্লাহ মিয়াজী অপহৃত হননি, বরং তিনি নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। গাজীপুর থেকে নিজ ইচ্ছায় বাসে চড়ে পঞ্চগড়ে গিয়ে নিজের পায়েই শিকল জড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান। সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাহেরুল হক চৌহান জানান, তদন্তে দেখা যায়, ভুক্তভোগী তার বাসা থেকে একা হেঁটে বের হন এবং কোথাও কোনো অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল দেখা যায়নি। বাদী তার এজাহারে চার-পাঁচ ব্যক্তি তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও ওই সময়ের তিন ঘণ্টার মধ্যে সেখানে সিসি ক্যামেরায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা যায়নি। প্রযুক্তির সহায়তায় ২২ অক্টোবর বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে তার অবস্থান ঢাকার সোবহানবাগ এলাকায় শনাক্ত করা হয়।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকা থেকে হাঁটতে বেরিয়ে খতিব মোহেববুল্লাহ অপহৃত হন বলে অভিযোগ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, একটি অ্যাম্বুলেন্সে চার-পাঁচ লোক তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় এক দিন ও এক রাত নির্যাতনের পর তার দাড়ি কেটে দেওয়া হয় এবং কাচের বোতল দিয়ে শরীরে আঘাত করা হয়। শেষে পঞ্চগড়ে একটি গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে পা বেঁধে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। তার মোবাইল ফোন ও সিমকার্ডও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে স্থানীয়রা ‘৯৯৯’-এ ফোন দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। গত ২৪ অক্টোবর মুফতি মোহেববুল্লাহ নিজেই টঙ্গী পূর্ব থানায় এই এজাহার দায়ের করেন। তবে মামলাটির তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, মোহেববুল্লাহ মিয়াজী এরপর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের টিকিট কেটে দুপুর ২টায় পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রাপথে বগুড়ার শেরপুরে পেন্টাগন হোটেলে বাস বিরতি দিলে তিনি নেমে নামাজ পড়ে আবার বাসে ওঠেন, যার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে।
পুলিশের জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ মোহেববুল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটার সময় তার আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়। এরপর তিনি অটোরিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা পরিবর্তন করে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছান এবং সেখান থেকে পঞ্চগড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়ে বাস থেকে নেমে গভীর রাতে অন্ধকারে প্রস্রাব করার সময় ‘প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে’ তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে যায়, ফলে তিনি সেগুলো খুলে ফেলেন। এরপর ঠান্ডা ও ক্লান্তির কারণে তিনি আর পোশাক পরতে পারেননি। এ সময় রাস্তায় পড়ে থাকা একটি ছোট তালাসহ শিকল তিনি নিজের পায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে দেখতে পান।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন