বান্দরবানে চুরির অভিযোগ তুলে দুই তরুণকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার দুই তরুণ হলেন তাজউদ্দীন ও উলামং মারমা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, একটি চায়ের দোকানে দুই তরুণকে পিছমোড়া বেঁধে চুলের মুঠি ধরে নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলামকে (শহীদ মেম্বার) হাতে থাকা প্লাস দিয়ে তাজউদ্দীনের নখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করতেও দেখা যায়। ভিডিওজুড়ে ভুক্তভোগীর আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৬ অক্টোবর রাতে বান্দরবান সদর ইউনিয়নের গোয়ালিয়াখোলা এলাকায় চুরির একটি ঘটনার অভিযোগ ওঠে তাজউদ্দীন ও উলামংয়ের বিরুদ্ধে। পরদিন ২৭ অক্টোবর সালিশি বৈঠকের কথা বলে তাদের ডেকে নেওয়া হয় সদর ইউনিয়নের রোয়াজাপাড়া এলাকার চিনুমং মারমার চায়ের দোকানে। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই দুজনকে বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে কয়েকবার জ্ঞান হারান তাজউদ্দীন। পরে স্থানীয়রা তাদের পুলিশে সোপর্দ করে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা তাদের মারিনি, বরং স্থানীয়দের রোষানল থেকে বাঁচানোর জন্য সামান্য হাত তুলেছি।’
তবে নির্যাতনের শিকার তাজউদ্দীনের পিতা আহমদ হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে মিথ্যা অভিযোগে আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে শহীদ মেম্বার ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় আমি সাতজনের নাম উল্লেখ করে বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৭ অক্টোবর সকালে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছি। বিচারক মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন সদর ইউনিয়নের সাবেক যুবলীগ সভাপতি নুরুল আলমের ছেলে শহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি মৃত হামিদ বক্সের ছেলে মো. ইছহাক, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ সম্পাদক মো. ইছহাকের ছেলে শহিদুল ইসলাম, মৃত নজু মিয়ার ছেলে শাহ আলম, আহমদ কবিরের ছেলে মো. ওসমান, মো. সুজন, আবুল বশরের ছেলে জিকু এবং আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম বলেন, চুরির মামলায় দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তবে নির্যাতনের অভিযোগে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন