কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। গত সোমবার রেলপথ অবরোধের পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে অবরোধ করা হয়েছে নৌপথ। এ সময় আন্দোলনকারীরা মেঘনা নদীর ভৈরববাজার লঞ্চঘাট ও কার্গোঘাটে অবস্থান নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নৌপথ অবরোধ করে রাখেন। পরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সড়ক, রেল, নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে ভৈরবে রেলওয়ে স্টেশনে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় দেড়শজনকে আসামি করে মামলা করেছেন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করেছে রেলওয়ে পুলিশ। গত সোমবার রাতে ভৈরব রেলওয়ে থানায় এই মামলা করা হয়।
ভৈরব নৌ-থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সকালে ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ সময় আমাদের পক্ষ থেকে তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় জেলা ঘোষণার দাবিতে বক্তারা বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) শান্তিপূর্ণ রেল অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। কিন্তু হঠাৎ ট্রেনচালক জোরে জোরে ট্রেনের হুইসেল বাজানোর কারণে জনতা নিজেদের রক্ষা করতে পাথর নিক্ষেপ করে। তবে এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায় স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে থানার ওসির। আমরা ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে আগেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’
ভৈরব জেলা বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা সাইফুর রহমান শাহরিয়ার বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবা। ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে আজ (গতকাল) নৌপথ অবরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’
কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারীরা ভৈরবকে জেলা ঘোষণার জন্য আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় তারা ভৈরবকে জেলার দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার একযোগে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ করার ঘোষণা দেন।
এ সময় জেলা আন্দোলনের নেতা মাওলানা সাইফুল ইসলাম শাহারিয়া, গণঅধিকার পরিষদ নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, ছাত্রনেতা জুনাইদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ভৈরব বাজার লঞ্চঘাটে নৌপথ অবরোধ চলাকালে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এএইচএম মো. আজিমুল হক, ভৈরব নৌ-থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ভৈরবে রেলওয়ে স্টেশনে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় দেড়শজনকে আসামি করে মামলা করেছেন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ। এ ছাড়া এই ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করেছে রেলওয়ে পুলিশ। গত সোমবার রাতে ভৈরব রেলওয়ে থানায় এই মামলা করা হয়। এ ঘটনায় আটরা হলেনÑ মো. সাজন, মো. ফাহিম ও এক কিশোর।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভৈরব বাজার জংশন রেলওয়ে স্টেশনে ভৈরবকে ৬৫তম জেলা ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে ‘পল্লী জাগরণী সংঘ’ নামে একটি স্থানীয় সংগঠনের ২০০-২৫০ জন স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মের ফুটওভার ব্রিজসংলগ্ন ১ নম্বর লাইন অবরোধ করেন। এ সময় ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে আটকে থাকা উপকূল এক্সপ্রেস ঢাকার দিকে চলতে শুরু করে। এ সময় অবরোধকারীরা অতর্কিতভাবে ট্রেনের ইঞ্জিন, বগি লক্ষ্য করে রেললাইন ও প্লাটফর্মে থাকা ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন কোচের একটি লুকিং গ্লাস, একটি হেড লাইট, একটি সাইড গ্লাস, গার্ডরুমের একটি গ্লাস ও খাবার বগির দুটি গ্লাসসহ ট্রেনের ইঞ্জিনের ওপরের বিভিন্ন স্থানের রং চটা হয়ে আনুমানিক দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ জানান, জেলা ঘোষণার দাবিতে রেলপথ অবরোধের সময় দীর্ঘক্ষণ স্টেশনে ট্রেন আটকিয়ে অবরোধ কর্মসূচির শেষের দিকে হঠাৎ করে বৃষ্টির মতো ট্রেনে পাথর ছোড়া হয়। এ ঘটনার ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতি ও যাত্রীদের ভয়ভীতির দেখানোর অভিযোগে ভৈরব রেলওয়ে থানায় আমার মাধ্যমে অজ্ঞাত দেড়শজনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি মো. সাঈদ আহমেদ জানান, সোমবার রেলওয়ে স্টেশনে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় দেড়শজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রকৃত জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ দেখ শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন