দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি চীনের পণ্যে শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে এপেক সম্মেলনের ফাঁকে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দুই বিশ্বনেতা। এ সময় চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকটি খুবই ‘চমৎকার’ হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই তিনি (শি) আমার বন্ধু। এটা ভেবে দেখলে সত্যিই আমাদের দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক। একজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত শি চিনপিং সহায়তা করবেন বলেও জানান ট্রাম্প।
শির সঙ্গে বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি বলেন, বৈঠকে চীনের পণ্যে আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রেয়ার আর্থ (দুর্লভ খনিজ) রপ্তানিতে বিধি-নিষেধের বিষয়টিও সমাধান করা হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘চীনের ওপর ৫৭ শতাংশ শুল্ক আমি ৪৭ শতাংশে নামাতে সম্মত হয়েছি, বিনিময়ে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা পুনরায় শুরু করবে, রেয়ার আর্থ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি অব্যাহত রাখবে এবং ফেন্টানিল (মাদক) বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাব্য অবসানেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এক বছরের একটি বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, যা নিয়মিতভাবে বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, আমাদের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় বেইজিং আবার আমেরিকান সয়াবিন কেনা শুরু করবে, বিরল ধাতু রপ্তানি অব্যাহত রাখবে এবং ফেন্টানিলের অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করবে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করবেন। এরপর চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তিনি আরও জানান, বিরল খনিজ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং নতুন শুল্কহার তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এ ছাড়া চীনের ফেন্টানিলের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে আগ্রহী।
রয়টার্সের পূর্ববর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই নেতার বৈঠক মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের আগে বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত কাঠামোগত ঐকমত্যের কথাও জানানো হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে পারস্পরিক বিরোধ আমলে নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তারা চুক্তির কাঠামোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। গতকালকের বৈঠকে ট্রাম্পের কথায় তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল। এই কাঠামো চূড়ান্ত হলে চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে শুল্ক বাড়াবে না। চীন বিরল খনিজ ধাতু রপ্তানির ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধ সাময়িকভাবে স্থগিত করবে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এর আগে জানিয়েছিলেন, আসিয়ান সম্মেলনের আলোচনার ফলস্বরূপ আগামী ১ নভেম্বর থেকে চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শতভাগ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চীন চৌম্বক পদার্থসহ বিরল খনিজ রপ্তানিতে লাইসেন্স নেওয়ার প্রথা অন্তত এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেবে। এই শুল্ক হ্রাসের পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এবার দুই দেশের পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প ৫৭টি দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে তিন মাসের জন্য সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছিলেন, যার মধ্যে চীন ও ভারতসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনো হয়নি। তবে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে ‘শুল্ক বিরতির খেলা’ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে রসদ জোগানোর অভিযোগে ভারতের পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই নতুন শুল্ক হ্রাস বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলে তা দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে।

