যেদিকে চোখ যায় চারদিকে শুধু পাখি আর পাখি। শত শত বললে ভুল হবেÑ হাজার হাজার অতিথি পাখি। এসব পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে, জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর গ্রামে। এখানকার মাঠে-ময়দানে এমনকি বাড়ির পাশের গাছসহ গোটা গ্রামই এখন পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল। কানাইপুকুর গ্রামে ঠাঁই নেওয়া পাখিদের অধিকাংশই শামুক খৈল বা শামুক ডাংগা পাখি। পাখিদের সমারোহের কারণে এ গ্রামটি এখন পাখির গ্রাম নামেই পরিচিত। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ভোরে পাখির কিচির মিচির শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে।
ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীতে জাহাঙ্গীর আলমের বাবা আব্দুস সোবহান কয়েক বছর আগে এখানে পাখিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই বিভিন্ন সময় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি নামে গ্রামের মাঠে-ঘাটে। পাখিগুলো অক্টোবর মাসের দিকে চলে যায়। কিছু পাখি থেকেও যায়। আবার মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ দলবেঁধে ফিরে আসে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি গাছে পাখিরা বসবাস করে বিধায় গ্রামবাসী গাছের ডাল কাটে না।
জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, আমরা এই পাখিগুলোর যতœ নেওয়ার চেষ্টা করি। কেউ যেন শিকার না করে সেদিকে খেয়াল রাখি। দিনের বেলা খাবারও ছিটিয়ে দেই। আমাদের সন্তানদের মতোই পাখিদের দেখি।
তবে কানাইপুকুর গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না বিধায় এখানে পাখিপ্রেমীদের আসতে বেশ কষ্ট পোহাতে হয়। স্থানীয়রা বলছেন, একটি পাকা রাস্তা এবং কয়েকটি স্থানে বসার ব্যবস্থা করা গেলে গ্রামবাসীর যেমন উপকার হতো, তেমনি এখানে পাখি দেখতে আসা মানুষের জন্যও সুবিধা হতো। কানাইপুকুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, এখানে রাস্তার জন্য দীর্ঘদিনের দাবি আমাদের। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। পাশাপাশি এ গ্রামকে পাখিদের নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে তৈরিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধারও দাবি তাদের।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী রবিউল ইসলাম সোহেল বলেন, কানাইপুকুর গ্রামের বাসিন্দারা মানুষ হিসেবেও বেশ ভালো। তারা নিজেদের স্বজনের মতোই এ পাখিদের আগলে রেখেছে। গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে এখানে পাখি দেখতে আসা মানুষদের জন্যও কোনো সুব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করার চন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে এগিয়ে আসা উচিত। অতিথি পাখি আমাদের মেহমান, তাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব।
জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, এই গ্রামে প্রায় বছরজুড়েই পাখিরা বসবাস করে। পাখিদের রক্ষার দায়িত্ব শুধু গ্রামবাসীর নয়। জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি গ্রামবাসীর মধ্যেও আরও বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচিও নেওয়া যেতে পারে। অতিথি পাখি রক্ষার দায়িত্ব নিলে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাবে।

