* ‘আমাদের সময় এখন’
** সর্বশেষ জরিপেও কুমোর চেয়ে ১৪.৩ পয়েন্ট এগিয়ে জোহরান
ভোট শুরুর আগে প্রচারণার শেষ দিনও নিজের ধারা থেকে বের হয়ে আসেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। উল্টো হুমকি দিয়েছেন, ‘কমিউনিস্ট’ মামদানিকে জেতালে পস্তাতে হবে নিউইয়র্কবাসীকে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে ট্রাম্প জোহরান মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে গালি দিয়েছেন।
‘আমার মেয়র, তোমার মেয়র, মামদানি মামদানি’ স্লোগান শুনে প্রথমে মনে হতে পারে এটি বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনি প্রচারণার অংশ। কিন্তু বাস্তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন ঘিরে বাঙালিদের দেওয়া স্লোগান। গত রোববার নিউইয়র্কের হিলসাইড অ্যাভিনিউতে মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির এক নির্বাচনি সভায় বাঙালি সমর্থকেরা এই স্লোগান দেন। সেই সভার প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলো দেখা যায় মামদানির অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে। সেখানে উচ্ছ্বসিত জনতার ভিড় লক্ষ করা গেছে, যেখানে বাংলাদেশি, ভারতীয় ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় নাগরিকেরা অংশ নিয়েছেন।
এদিকে নিউইয়র্কের ডেমোক্রেট মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে ঠেকাতে বেপরোয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তরুণ মুসলিম বিজয়ী হলে শহরের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় তহবিল বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই নয়, নিজে রিপাবলিকান হয়েও আরেক ডেমোক্রেট স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর প্রতি সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্প। ভোট শুরুর আগে প্রচারণার শেষ দিনও সেই ধারা থেকে বের হয়ে আসেননি ট্রাম্প। উল্টো হুমকি দিয়েছেন, ‘কমিউনিস্ট’ মামদানিকে জেতালে পস্তাতে হবে নিউইয়র্কবাসীকে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে ট্রাম্প জোহরান মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে গালি দিয়েছেন। ট্রাম্প নিউইয়র্ককে তার ‘ভালোবাসার প্রথম আবাস’ বলে উল্লেখ করেন। তবে জোহরান মামদানি জিতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকার খুব বেশি তহবিল দেবে না। নিউইয়র্ক তার যত প্রিয়ই হোক না কেন, তিনি ওই মহানগরীর জন্য ন্যূনতম বাজেট রাখবেন বলেও হুমকি দেন।
মেয়র নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন আলোচিত প্রার্থী মামদানি। হুমকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ও জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার। প্রায় ৮০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে আগাম ভোটে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য ছিল। ইতিমধ্যে ৭ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এ নির্বাচনে সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়েছে; শুধু রোববারই ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ ভোট দিয়েছেন। তরুণ ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল নজরকাড়া। এই হার ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা) থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ভোট চলে। বড় বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে এই নির্বাচনে সবার থেকে এগিয়ে আছেন মুসলিম, আফ্রো-এশীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি। বিজয়ী হলে বিখ্যাত ভারতীয় চিত্রনির্মাতা মিরা নায়ারের সন্তান জোহরান মামদানিই হবেন দক্ষিণ এশিয়া থেকে নির্বাচিত এবং নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষদের পরাস্ত করার পর থেকেই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুনজরে আছেন জোহরান মামদানি। জোহরান মামদানির ভক্তদের মন বিষিয়ে তুলতে ট্রাম্প বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানি বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। সর্বশেষ চারটি জরিপে তিনি বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। নির্বাচনের এক দিন আগে তিনি সমর্থকদের নিয়ে সিটি হলের উদ্দেশে হেঁটে যান, হাতে ছিল সাদা ও নীল ব্যানার, যার ওপর লেখা ছিলÑ ‘আমাদের সময় এখন’। এই দৃশ্য তার প্রচারণায় নতুন উদ্দীপনা যোগ করে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে জোহরান মামদানি ইতিহাস গড়েছেন প্রথম মুসলিম প্রার্থী হিসেবে। তিনি তার নির্বাচনি প্রচারণায় আবাসন খাতের সংস্কার ও জলবায়ু নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট ধারণায় বিশ্বাসী এই তরুণ অল্প সময়ের মধ্যেই প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত রাজনৈতিক মুখে পরিণত হয়েছেন। যদি তিনি বিজয়ী হন, তাহলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র।
সর্বশেষ রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকস জরিপে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানির প্রতি ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটারের। এই জরিপ অনুযায়ী কুমোর চেয়ে ১৪ দশমিক ৩ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন জোহরান। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন রয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে গত সোমবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রিপাবলিকান দলীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। এ দুই প্রভাবশালীর শেষ মুহূর্তের সমর্থন ভোটারদের মন পরিবর্তন করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন