বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীর মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে ৬ আসামির যাবজ্জীবন দ- বহাল রেখেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বেঞ্চ পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিতে স্বাক্ষর করে তা প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছে। এখন আসামিদের সামনে রয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ।
হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল শুনানি শেষ হয়েছিল গত ২৯ মে। এরপর ২ জুন হাইকোর্ট মৌখিকভাবে প্রদীপ এবং লিয়াকতের মৃত্যুদ- বহাল রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। পাশাপাশি যাবজ্জীবন পাওয়া ছয় আসামির সাজা ও প্রত্যেকের ওপর ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও অপরিবর্তিত রাখেন আদালত।
ঘটনার পটভূমিতে জানা যায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ওই সময় বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ঘটনার পাঁচ দিন পর নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর র্যাব আদালতে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। র্যাবের ওই চার্জশিটে ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকা- হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ওই মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। পাশাপাশি এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব এবং কক্সবাজারের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়। অন্যদিকে সাত আসামি খালাস পান।
রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদ- নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাইকোর্টে আসে। একই সময়ে দ-প্রাপ্ত আসামিরাও আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে মামলাটি এখন আপিলের পর্যায়ে গেল।
আইনজীবীরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ায় এখন আপিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মামলার জটিলতা এবং আলোচিত চরিত্রগুলোর ভূমিকা বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।

