ধারাবাহিক বাংলা সাহিত্য যুগের পর যুগ ধরে গভীর ভাবনা ও নিখুঁত প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে গৌরবমণ্ডিত হয়েছে অসংখ্য লেখকের মাধ্যমে। সেই ধারারই একজন উজ্জ্বল প্রতিনিধি, সমকালীন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন। তার হাত ধরেই হুমায়ূন আহমেদ পরবর্তী সময়ে বই পড়ার সংস্কৃতি ও বইমেলায় পাঠকের দীর্ঘ সারি নতুন উদ্দীপনায় ফিরে এসেছে। তার সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা ও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আরফান হোসাইন রাফি।
আপনি পেশাদার ফটোসাংবাদিক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১৩ সালে প্রথম বই ‘গল্পছবি’ প্রকাশ করেন। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতাম। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন বাবা স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান। ফলে নানা পারিবারিক দায়িত্ব কাঁধে পড়ায় লেখালেখি ছেড়ে দিই। পরবর্তীতে একসময় আমার ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। এরপর একটি দৈনিকে ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করতাম। একদিন সম্পাদক বললেন, ‘তোমার ছবিগুলো এত সুন্দর, অনেকটা গল্পের মতো। ছবির সঙ্গে একটা করে গল্প লিখে দাও।’ পরবর্তীতে ছবি এবং ছবির গল্প নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়, যার নাম ‘গল্পছবি’। বইটি প্রকাশের পর দেখলাম, মানুষ আমার ছবির চেয়ে লেখার প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। তখন আমার ভুলে যাওয়া অস্তিত্ব নতুন করে জেগে ওঠে। এরপর ২০১৫ সালে ‘আরশিনগর’ উপন্যাস ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ায় আমি আমার লেখক সত্তাকে নতুন করে আবিষ্কার করি।
বাংলা এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্যে কাদের বেশি পড়া হয়?
আন্তর্জাতিক সাহিত্য যদি বলেন, আমি তো আসলে অনুবাদ পড়ে বড় হয়েছি। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ পড়া হতো। চার্লস ডিকেন্সের ‘এ টেল অফ টু সিটিজ’ আমার খুব প্রিয় বই। তারপর আলেকজান্ডার দ্যুমার ‘দ্য কাউন্ট অব মন্টে ক্রিস্টো’, পল উইলম্যানের ‘দি আয়রন মিস্ট্রেস’ ভিক্টর হুগোর ‘লে মিজারেবল’ এবং গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের আলোচিত বই ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড’সহ নানা বই পড়া হয়েছে। এখনকার সময় এসে মুরাকামি, পাওলো কোয়েলহো, জেমস প্যাটারসন–ওদের লেখা ভালো লাগে। আর বাংলা সাহিত্যে আমাকে লেখালেখিতে সবচেয়ে বেশি প্রণোদিত করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সুনীল আমার একটা সময় খুব বেশি ভালো লাগত না, কিন্তু ইদানীং মনে হয়, সুনীলকে আমি নতুন করে আবিষ্কার করতে পারছি। এ ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, রকিব হাসান–যার কথা বিশেষভাবে বলতে হয়, ছোটবেলায় তিন গোয়েন্দা পড়ে লেখালেখি করতে ইচ্ছে হতো।
গল্প, কবিতা ও উপন্যাস–তিন ধারাতেই লিখছেন। কোনটি আপনার সবচেয়ে পছন্দের?
অবশ্যই উপন্যাস। আমি সবচেয়ে বেশি অবহেলা করেছি কবিতাকে, অতটা সিরিয়াসলি নেইনি। যখন যা মনে হয়েছে, লিখে ফেলেছি। আমি তো কখনো কখনো বলি, এগুলো আসলে কবিতাও নয়। আমি নিজেকেও কবি হিসেবে দাবি করি না। তবে একটা অদ্ভুত বিষয় হলো, কবিতা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অবস্থা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা আসলে বলা কঠিন। তবে যেহেতু আমরা সবসময় বর্তমানকে অতীতের সঙ্গে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি, সেহেতু অতীতকে নিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের স্মৃতিকাতরতা কাজ করে। বলা হয়, অতীত সবসময় সোনালি। সেই প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে, বর্তমান বাংলা সাহিত্যে প্রণোদনার একটা অভাব রয়েছে। এর কারণ আমাদের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা; একজন লেখক লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন না। ফলে তাকে অন্য পেশায় যুক্ত হতে হয়। লেখালেখি তো এক ধরনের নিমগ্ন আরাধনা; কিন্তু জীবিকার তাগিদে সেই নিমগ্নতার সুযোগটা থাকে না। সারাদিন ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে অফিস করে এসে, আনুষঙ্গিক নানারকম কাজ ও পরিবারকে সময় দিয়ে লেখার মতো মানসিক অবস্থা বা সময়ের অবকাশ পাওয়া কঠিন। আমরা যখন পশ্চিমা সাহিত্যের দিকে তাকাই, দেখি সেখানে একজন লেখকের কোনো একটি বই পাঠকপ্রিয় হলে তিনি মোটামুটি দশ-পনেরো বছর নিশ্চিন্তে সাহিত্যচর্চায় নিমগ্ন থাকতে পারেন। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা তেমন নয়। তার ওপর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এক ধরনের নয়েজ তৈরি হয়েছে, যা অনেককেই বই থেকে বিমুখ করছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বর্তমান বাংলা সাহিত্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বইমেলাকেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে এবং উত্তরণের পথ কোথায়?
আমি এবার আমেরিকা গিয়েছিলাম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার ৩৫তম আসর উদ্বোধন করতে। পূর্বে যারা এ মেলাটি উদ্বোধন করেছেন, তারা বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি। আমি হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে মেলাটি উদ্বোধন করেছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের অনেক বইমেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে দেখেছি, সবাই বইমেলাকে কেন্দ্র করেই বই কিনে কিংবা বইমেলাকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশে আসতে চান। আমাদের দেশেও এই চর্চাটা সবার মধ্যে আছে। এর কারণ হতে পারে দুটি–একটি হলো, আমাদের দেশে পাঠাভ্যাসটা নেই। একটা সময় ছিল, মা-বাবারা বাচ্চাদের ‘কেরছা’ (গল্প) বা কবিতা শুনিয়ে ঘুম পাড়াতেন। সে সময় বই পড়ার সংস্কৃতি ছিল। দাদা-দাদি, নানা-নানিরা সবাই অতো শিক্ষিত না হলেও বই পড়ে সময় কাটাতেন। বাচ্চারা অনুকরণপ্রিয়, ফলে তাদের মধ্যেও পাঠাভ্যাস তৈরি হতো। এখন বাচ্চারা মোবাইল দেখে ঘুমায়, তাই এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, বইমেলা এখন বইয়ের চেয়ে বেশি উৎসবের মতো। এক মাসজুড়ে আলো-ঝলমলে এক পরিবেশে সবাই মেতে থাকে। এখন উৎসবকে কেন্দ্র করে বই তৈরি হচ্ছে, অথচ বইকে কেন্দ্র করে উৎসব হওয়ার কথা ছিল। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত পাঠাভ্যাস গড়ে না ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত উত্তরণ সম্ভব নয়। আমার মনে আছে, আমাদের স্কুল ছিল অজপাড়া গাঁয়ের টিনের একটি স্কুল, বৃষ্টি হলে পানি পড়ত। প্রতি বৃহস্পতিবার ছুটির পর বাসায় যেতে দিত না; নাচ, গান, কবিতা পাঠ ইত্যাদি সংস্কৃতিচর্চা হতো। ক্লাসে বিজয়ীদের বই উপহার দেওয়া হতো। স্কুলে খেলাধুলায় পুরস্কার হিসেবে থালা-বাসন, কাপের সঙ্গে বইও থাকত। এখন সেই সংস্কৃতিটা প্রায় বিলুপ্ত। তাই সংস্কৃতিচর্চা গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখককে লেখালেখির পাশাপাশি বই বিক্রির দায়িত্ব নিতে হয়–এ ক্ষেত্রে লেখালেখির ওপর কোনো প্রভাব পড়ে কি?
এটা খুবই ভালো প্রশ্ন। তবে এখানেও আমাদের বাস্তবতাটা বিবেচনায় নিতে হবে। উন্নত দেশে লেখকদের বই বিক্রির জন্য আলাদা মার্কেটিং এজেন্সি থাকে, এমনকি অনেক লেখকের নিজস্ব ম্যানেজারও থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টা বড় ভূমিকা রাখে। একজন প্রকাশক কোনো লেখকের বই বিক্রির জন্য প্রমোশন করলে সেই খরচ অনেক সময় বিক্রির মাধ্যমে উঠে আসে না। এ ছাড়া একটি বই প্রকাশের পর বই সংরক্ষণের জন্য বছরজুড়ে গুদাম ভাড়া, বইমেলায় স্টল, বিক্রয়কর্মীর খরচ এবং প্রকাশনীর বাইরে অন্য প্ল্যাটফর্মে বই দিলে প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়সহ নানারকম ব্যয় থাকে। দিনশেষে প্রকাশকের জন্যও এটা একটা ব্যবসা। তারও লাভ-ক্ষতির হিসাব রাখতে হয়। যেকোনো বই প্রকাশের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবিকা জড়িত। এমন না যে আমাদের দেশে সরকার এ খাতে বড় কোনো সহায়তা বা ভর্তুকি দেয়! তাই উন্নত বিশ্বের প্রকাশনা কাঠামোর সঙ্গে আমাদের তুলনা করা যাবে না। আমাদের বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই বিষয়টি বুঝতে হবে।
সাম্প্রতিক প্রকাশনা জগতে অনেক অনভিজ্ঞ প্রকাশকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনেকেই সাহিত্যকে গুণগত মানের চেয়ে টাকার দিক থেকে বিচার করছে, আবার অনেকে নতুন লেখকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই প্রকাশ না করে গা-ঢাকা দিচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
টাকা নিয়ে বই প্রকাশ না করে গা-ঢাকা দিচ্ছে এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আর সাহিত্যর গুণগত মান দেখার বিষয়টি আসলে আমাদের দেশে খুব একটা প্রতিষ্ঠিত নয়। কারণ, কে দেখবে? কে হবে বিচারক? আর বই প্রকাশকে আমি খুব ইতিবাচকভাবে দেখি। যে বই প্রকাশ করছে, তার লেখা হয়তো অপরিপক্ব, কিন্তু সে তো ড্রাগস নিচ্ছে না, চুরি করছে না বা রাস্তায় অপকর্ম করছে না; সে লেখালেখির মতো একটি সৃজনশীল বিষয় চর্চা করছে, এতে কারোর ক্ষতি হচ্ছে না। তাই আমি মনে করি, যে কেউ বই প্রকাশ করুক, যদি সেটা সমাজ বা জাতির জন্য ক্ষতিকর না হয়।
সমালোচনা বা নেগেটিভ রিভিউকে আপনি কীভাবে গ্রহণ করেন?
সমালোচনাও সাহিত্য, শিল্প-সাহিত্যের একটি বড় শাখা। কিন্তু আমাদের দেশে তো আর সমালোচনা হয় না, আমাদের দেশে হয় বিষোদ্গার কিংবা সহজ কথায় বুলিং! কারো কাছে কিছু ভালো লাগল না মানে বিষয়টা খারাপ নয়। ভালো না লাগার মতামত প্রকাশ করা ভালো দিক, তবে আমাদের দেশে এটা প্রকাশ করার যে ধরন, সেটা গঠনমূলক কিছু না; উদ্দেশ্য থাকে একজন সাহিত্যিককে দুমড়ে-মুচড়ে নাকজ করে দেওয়ার। মানে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোই লক্ষ্য থাকে বলা যায়। তাই সমালোচনা যে করবে, তাকে সমালোচনা সম্পর্কে জানতে হবে, অধ্যয়ন নিতে হবে।
অনেক পাঠকের মতে, আপনার লেখায় হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আমার মনে হয় যে, মানুষের মধ্যে চটজলদি কোনো একটা বিষয়ে প্রবণতা থাকে। হুমায়ূন আহমেদ স্যার যেহেতু বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত বটবৃক্ষ, তাই মানুষের মন এবং মননে ওনার লেখার সহজবোধ্যতা এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে মানুষ সেই ঘোর থেকে আর বের হতে পারছে না। তাই অন্য লেখকের মধ্যে যতটা না ওনার প্রভাব, তার চেয়ে বেশি অবচেতনভাবে তারা খুঁজে বেড়ায়। এখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমার লেখা এবং ওনার লেখার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। আমার লেখাগুলো সাধারণত বর্ণনাধর্মী, খুব বেশি সংলাপাত্মক নয়, আর স্যারের লেখা সংলাপাত্মক। এটা নিয়েও আমার সমালোচনা আছে যে, আমি অনেক বর্ণনাধর্মী লিখি। সাহিত্য হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি রেস, খুব দ্রুত কারো সম্পর্কে বলা কঠিন। ২০১৩-২০২৫ পর্যন্ত আমি এক যুগ ধরে লিখছি এবং সময়ের বাস্তবতায় আমি এখনো প্রাসঙ্গিক আছি। বর্তমানে যেখানে এতগুলো বিকল্প বিনোদনের মাধ্যম আছে, সেখানে কোনো লেখক এক যুগ ধরে পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে! সেটা শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত ও আমেরিকাসহ সব জায়গায়। মৌলিকতা না থাকলে, নিশ্চয়ই সেটা সম্ভব হতো না।
সাহিত্য জীবনে উত্থান-পতন তো সবারই থাকে। আপনার যাত্রাপথে এমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা যদি শেয়ার করতেন।
সাহিত্যে আমার কোনো প্রত্যাশা ছিল না, তাই যা পেয়েছি, তা আমার জন্য অফুরান প্রাপ্তি। বাংলাদেশের বাস্তবতায় শুধু লেখালেখি করে যেখানে জীবিকা নির্বাহ প্রায় অসম্ভব, সেখানে আমি বেশ ভালোভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছি। এ ছাড়া কলকাতায়, একসময় যেখানে সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশদের বই বাংলাদেশের ঘরে ঘরে দেখা যেত, সেখানে আমার বই কিনতে বইমেলায় দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পুলিশের সহযোগিতা নিতে হয়। আর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ঢুকলে তো গেট বন্ধ করে দেওয়া লাগে–এ রকম অবস্থা হয়। বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমার কথা শোনার জন্য মানুষ টিকিট কেটে আমার অনুষ্ঠানগুলোতে আসে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বইমেলাতেও আমি অংশগ্রহণ করছি। শুধু এটুকুই নয়, আমেরিকার কুইন্স লাইব্রেরিতেও গিয়ে দেখি বিভিন্ন ভাষাভাষীর সঙ্গে আমার হাজারটা বই রাখা আছে। আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি, এতো মানুষ আমার বই পড়বে। মানুষের কাছে পৌঁছানোই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এতো পরিমাণ ভালোবাসা পাওয়ার পর আমার মনে হয় না উত্থান-পতনের প্রশ্ন বলে কিছু থাকে। আমার আর কোনো আক্ষেপ নেই।
নতুনদের কিছু ভুল এবং আপনার পরামর্শ
এখন অনেকেই অতি তাড়াহুড়ো করে বই প্রকাশ করছে। আমি বই প্রকাশের বিপক্ষে নই, কিন্তু বই প্রকাশের আগে একজন লেখকের নিজের পাঠক থাকা খুবই জরুরি। কারণ, বই তখনই অর্থবহ হয় যখন কেউ সেটি পড়ে, অনুভব করে, ভাবনায় রাখে। এখানে প্রশ্ন আসে, পাঠক তৈরি হবে কীভাবে? একসময় লেখকরা নিয়মিতভাবে পত্রিকায় লিখতেন, পাঠকের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠত ধীরে ধীরে। এখন সময় বদলেছে, সোশ্যাল মিডিয়া সেই কাজটাই আরও সহজ করে দিয়েছে। এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে নতুনদের। তাই আমার পরামর্শ থাকবে, নিয়মিত লিখুন এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়া শুনুন, বুঝুন, শিখুন। ধীরে ধীরে একদিন দেখবেন, আপনার নিজস্ব পাঠকগোষ্ঠী তৈরি হয়ে গেছে। এরপরই আসতে পারে বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত। আমি আবারও বলছি, আমি বই প্রকাশের বিপক্ষে নই–তবে তার আগে প্রয়োজন নিজেকে আরও ঝালাই করা, নিজের সংকট খুঁজে বের করা এবং শব্দের ওপর দখল তৈরি করা।