রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে জামাই-শ^শুর হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি ঘটনাস্থলের আশপাশে। রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রফিকুল ইসলাম, আক্তারুল, এবাদত ও মিজানুর রহমান। তাদের বাড়ি সয়ার এলাকায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নিহত রূপলাল রবিদাস পেশায় জুতা সেলাই করতেন তারাগঞ্জ বাজারে। ঘটনার দিন তিনি মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভাগ্নি জামাই প্রদীপ লালকে নিয়ে ভ্যানে করে বাড়ি ফেরার পথে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাঁদের পথরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সন্দেহভাজনেরা প্রদীপ লালের কালো ব্যাগ তল্লাশি করে ‘স্পিড ক্যানের’ বোতলে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় এবং কিছু ওষুধ পান। বোতলের ঢাকনা খুলে গন্ধ শুকতে গিয়ে বুড়িরহাট এলাকার মেহেদী হাসানসহ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে উত্তেজিত হয়ে রূপলাল ও প্রদীপ লালকে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে নিয়ে ৫০০-৭০০ মানুষ লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে তাদের মাঠেই ফেলে রাখে। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক রূপলালকে মৃত ঘোষণা করেন এবং প্রদীপ লালকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রদীপ লাল ভোর ৪টায় মারা যান।
এ ঘটনায় গত রোববার দুপুরে নিহত রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এদিকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রূপলালের লাশ বাড়িতে আনার পর তা মহাসড়কের বেলতলী এলাকায় রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন এলাকাবাসী। এতে মহাসড়কের দুই ধারে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পরে দোষীদের যথাযথ বিচারের আওতার আনার আশ্বাসে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ইউএনওর অনুরোধে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে এলাকাবাসী।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, রূপলাল একজন নিরপরাধ ব্যক্তি। তাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। মারধরের সময় বাঁচার জন্য সে অনেক আকুতি-মিনতি করেছে। রূপলাল তাকে পুলিশ বা সেনাবাহিনীকে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু কেউ তার কথা শোনেনি। তাকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, দুজন নিহতের ঘটনায় নিহত রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তা ছাড়া এই ঘটনায় যাতে কোনো নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হয় এজন্য তদন্ত কার্যক্রম চলছে।