বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও উদ্বেগ রয়েছে

রূপালী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও উদ্বেগ রয়েছে

  • গুম, নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দিয়েছিল সাবেক সরকার
  • মানবাধিকার পরিস্থিতির স্বচ্ছ তদন্ত করেনি বিগত সরকার
  • বর্তমানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বাড়লেও অদৃশ্য চাপের অভিযোগ
  • অন্তর্বর্তী সরকার প্রচলিত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জাতিসংঘের সহযোগিতা নিচ্ছে

 


জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হলেও কিছু বিষয়ে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশভিত্তিক মানবাধিকার চর্চা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যদিও কিছু সাংবাদিকের অভিযোগ, কী প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে এখনো একধরনের ‘অদৃশ্য চাপ’ রয়েছে। গত মঙ্গলবার ‘২০২৪ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস: বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

প্রতিবেদনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু ক্ষেত্রে উন্নতির চিত্রও উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, টানা কয়েক সপ্তাহ ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ এবং পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষে শত শত মানুষের মৃত্যুর পর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে আগের সরকারের আমলে। এসব ঘটনার মধ্যে ছিল বেআইনি হত্যাকা-, গুম, নির্যাতন, নিষ্ঠুর বা অবমাননাকর আচরণ ও শাস্তি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক, বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত দমন, মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় গুরুতর বাধা, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা হুমকি, অযৌক্তিক মামলা ও সেন্সরশিপ, শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা, শ্রমিক অধিকারকর্মী ও ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের ওপর সহিংসতা এবং বাজে ধরনের শিশুশ্রম

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আগের সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তির অভিযোগ ছিল এবং সরকারি কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ খুব কমই নেওয়া হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় এনেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জুলাই ও অগাস্টে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করেছে এবং বিচার নিশ্চিত করতে দেশের প্রচলিত আদালত ও বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালÑ উভয়ই ব্যবহার করেছে।

প্রতিবেদনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- অংশে বলা হয়েছে, আগের সরকার বা তাদের এজেন্টরা গত বছর বহু বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে বলে অসংখ্য প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি এবং এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তও হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার এই তদন্ত শুরু করেছে। কিছু ক্ষেত্রে আগের সরকার অভিযোগ আনলেও সাধারণত দোষীদের প্রশাসনিক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। 

জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্যও প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের হার আগের বছরের প্রায় সমান ছিল।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানে এই অধিকার নিশ্চিত থাকলেও আগের সরকার নিয়মিতভাবে তা লঙ্ঘন করেছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা ছিল, যার ফলে অনেক সাংবাদিক ও ব্লগার প্রতিশোধ বা হয়রানির ভয়ে সরকারবিরোধী সমালোচনা থেকে বিরত ছিলেন। সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয় যে ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ সালের বাতিল হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় করা ১ হাজারের বেশি ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হবে, যেগুলো শেখ হাসিনাবিরোধী মত প্রকাশের কারণে দায়ের হয়েছিল। এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার অক্টোবর ও নভেম্বরে আগের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে ১৬৭ সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বীকৃতি ছাড়া সাংবাদিকেরা প্রকাশনা চালাতে পারলেও সরকারি অনুষ্ঠান বা সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে পারেননি। সংবিধানবিরোধী সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান গণ্য করার বিধানও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যার শাস্তি তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদ- পর্যন্ত হতে পারে। ঘৃণাসূচক বক্তব্যের সংজ্ঞা অস্পষ্ট হওয়ায় সরকার তা নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করতে পেরেছে এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা বা নৈতিকতার পরিপন্থি হলে বক্তব্য সীমিত করার ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসাবে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সিএসএ ও ডিএসএতে ১৯টি মামলায় ১২ জন গ্রেপ্তার এবং ৬২ জন অভিযুক্ত হয়েছেন। এসব আইন ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বক্তব্যের বিরুদ্ধে, এমনকি দেশের বাইরে অবস্থানরত সমালোচকদের বিরুদ্ধেও। সেপ্টেম্বরে খুলনায় উৎসব ম-ল নামে এক কিশোরকে ফেসবুক মন্তব্যের জেরে গণপিটুনি দেওয়া হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সিএসএতে মামলা হয় এবং পরে তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকারের আমলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং শাসক দলের ছাত্র সংগঠন জড়িত ছিল। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাংবাদিকদের দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, বিচার শুরুর আগেই আটক রাখা, ব্যয় সাপেক্ষ মামলা, জরিমানা, কারাদ- এবং সামাজিক কলঙ্কের ঝুঁকি ছিল সাধারণ ঘটনা। তবে আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১১৫টি ঘটনায় ৩৮৮ জন সাংবাদিক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন, এর মধ্যে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসাবে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা হয়রানির ১২০টি ঘটনায় দুই সাংবাদিক নিহত ও ১২৮ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকারের সময়ে স্বাধীন গণমাধ্যম সক্রিয় থাকলেও সমালোচনামূলক প্রতিবেদনের কারণে তারা নানা চাপে পড়ত এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেড়েছে, যদিও কিছু সাংবাদিক এখনো ‘অদৃশ্য চাপ’-এর অভিযোগ করছেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অন্তত চার সাংবাদিকÑ ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, মোজ্জাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত গ্রেপ্তার হন। তাদের আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে দেখা হতো এবং ২০ জনের বেশি সাংবাদিকের নাম মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই ঘটনায় আরও ২৮ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, স্বাধীন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অভিযোগ অনুযায়ী, আগের সরকারের সময়ে গোয়েন্দা সংস্থা সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করিয়ে গণমাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করত। সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম প্রচারের কারণে গণমাধ্যম শাস্তির মুখে পড়ত। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এসব পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!