ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যে স্বৈরাচারের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে - বললেন ডা. জাহিদ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০১:৪৫ এএম

ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘হবে না’ বলে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ‘স্বৈরাচারের পদধ্বনি’ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা অনেক কথা শুনতে পাই- কেউ কেউ বলেন, হুমকি দেন, আগামী নির্বাচন (ফেব্রুয়ারি) হতে দেবেন না।’

তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, সেই স্বৈরাচারের যে আচরণ ছিল, স্বৈরাচারের যে কথা ছিল, সেই ধরনের কথার পদধ্বনি আমরা শুনতে পাই। আমি আহ্বান জানাব, আপনাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকেন, ধমক দিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না নির্বাচনি অভিযাত্রাকে’। 

এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নির্বাচনের ডেট ঘোষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না’। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইয়েরা শহিদ হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তার লাশটা ফেরত দিতে হবে এ সরকারকে। আমার যে ভাইয়ের হাতটা চলে গিয়েছিল, যদি সংস্কার কাজ শেষ না করে নির্বাচন হয়, তাহলে এ সরকারকে আমার ভাইয়ের হাতটা ফিরিয়ে দিতে হবে, যে মায়ের বুক খালি হয়েছিল, ওই মায়ের বুকের সন্তানকে ফেরত দিতে হবে’।

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে এর দুই মাস আগে সূচি ঘোষণার কথা বলেছে।

দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসা বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। পরে জামায়াতও ফেব্রুয়ারির ভোট নিয়ে তাদের আপত্তি না থাকার কথা বলেছে। তবে সংস্কার ও অভ্যুত্থান ঠেকানোর ঘটনায় হওয়া মামলার বিচার না হওয়ার আগে নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গঠিত দলটি নির্বাচনের আগে এ দুই দাবির বাস্তবায়ন চেয়ে আসছে। এনসিপি নেতার এ বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘সে জন্য আজকে আমরা আশঙ্কিত হই অনেক সময়, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার জানিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পাই, সরকারের একটি অংশ, এখনো যারা সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, সেই অংশের পক্ষ থেকে কেউ কেউ যখন বলেন, নির্বাচন এটা না করলে হতে দেব না, ওটা না করলে হতে দেব না (তারা) আবার গণতন্ত্রের কথা বলবেন।’

এদিকে গতকাল বেলা ১১টায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ এবং মহাসচিব ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ নেতাদের নিয়ে জাহিদ হোসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, বিজন কান্তি সরকার, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ প্রবীণ-নবীন চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

পিআর পদ্ধতি মানুষ বোঝে না: সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গ টেনে জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী’। এ দেশের মানুষ জানতে চায় তার প্রতিনিধি কে? তাদের সরাসরি দেখতে চায়।’ পিআর পদ্ধতি কী, তা দেশের মানুষ জানে না এবং এ পদ্ধতিতে কখনো ভোট দেয়নি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশে পিআর আছে, নন-পিআর আছে। কিন্তু বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলেন, ভারত, তারপরে ইউকে (যুক্তরাজ্য), ইউএসএ (যুক্তরাষ্ট্র)। ওই সব দেশে কি পিআর পদ্ধতি অনুসরিত হচ্ছে? কোথাও না। কাজেই মনে রাখতে হবে, জনগণ তার প্রতিনিধিকে সরাসরি দেখতে চায় নির্বাচনের মাধ্যমে।’ 

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করার জন্য চিন্তাভাবনা করছেন তারাই হয়তো পিআর পদ্ধতির কথা বলে থাকেন। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জনগণের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। এই জনগণ বিগত ২০০৮ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত তাদের যে মালিকানা সেটা ফেরত পায় নাই। বিভিন্ন ধরনের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু মানুষের আকাক্সক্ষা হচ্ছে, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, নির্বিঘেœ দেব, নিঃসংকোচে দেব’। ’২৪-এর আন্দোলন একটি ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার আন্দোলন। কোনো একক গোষ্ঠীর আন্দোলন নয়, বলেন তিনি।