- মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখাঁরপুলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যদের গুলিতে শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে হত্যা মামলায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য দেওয়ার সময় শহিদ ইয়াকুবের চাচা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছলে দেখতে পাই, সেখানে হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে জড়ো হচ্ছিল। তখন দেখলামÑ চানখাঁরপুল মোড়ের উল্টা পাশে অনেক পুলিশ, ছাপা পোশাকধারী পুলিশ ছিল। পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি। পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছিল।
পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। আমরা যে যার মতো ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার সাক্ষ্য প্রদানকালে শহিদ ইয়াকুবের চাচা এসব কথা বলেন। শহিদ ইয়াকুবের চাচা সাক্ষীর জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার নাম শহীদ আহম্মেদ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত যে আন্দোলন চলে, সেই আন্দোলনের ৫ আগস্টের ঘটনা। আমি, আমার ভাতিজা ইয়াকুব, আমার ছেলে সালমান, এলাকার রাসেল, সুমন, সোহেলসহ আরও অনেকে বেলা আনুমানিক ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেই।
বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় আমরা চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছলে সেখানে হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে জড়ো হচ্ছিল। তখন দেখলাম চানখাঁরপুল মোড়ের উল্টা পাশে অনেক পুলিশ, ছাপা পোশাকধারী পুলিশ ছিল। পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি। পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছিল। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। আমরা যে যার মতো ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আবার আমরা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করি, তখন পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। আমার পাশের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে আমি সরাচ্ছিলাম। তখন আমাকে একজন বলে, আপনার ভাতিজা ইয়াকুবের গায়ে গুলি লেগেছে। আমি ঐ ছেলেকে আরেকজনের কাছে রেখে আমার ভাতিজার কাছে যাই। আরও দুইজনসহ ভাতিজাকে অটোরিকশায় করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন যে, ইয়াকুব মারা গেছে। আমি আমার ছেলে সালমানকে ফোন করে ইয়াকুবের মাকে জানানোর জন্য বলি এবং তাকে হাসপাতালে আসতে বলি।
সাক্ষী শহীদ আহম্মেদ জবানবন্দিতে বলেন, কারা গুলি করেছে তা আমি পরে জেনেছি। পরে জেনেছি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল, ইমাজ গুলি করেছিল। আরও অনেকেই ছিল। আমি অপরাধীদের বিচার চাই। পরে আসামিদের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
গতকাল তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে চার আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ চারজন হলেনÑ শাহবাগ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন মিয়া, ইমাজ হোসেন ইমন ও নাসিরুল ইসলাম। এদিকে সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ অপর চার আসামি এখনো পলাতক।
গত ৩ জুন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২৫ মে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ২৫ মে এ মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
গত ১৪ জুলাই এ মামলায় পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, রাকিব হাওলাদার, ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক শহিদ হন।