বাজারের ফর্দ শেষ হয় না, কিন্তু মানিব্যাগে টাকা শেষ হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে দেশে এখন সুশাসন দরকার। সেটা হয়নি বলেই রাষ্ট্রব্যবস্থায় এত বিচ্যুতি।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক সংলাপে অংশ নিয়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এ কথাগুলো বলেন। সংলাপটি আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। শিক্ষাবিদ আরও বলেছেন, শিক্ষায় হযবরল অবস্থা। স্বাস্থ্যে হযবরল অবস্থা। এ দুই খাতে সংস্কার কমিশন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলা নেই।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিনÑ একটি টিভি চ্যানেলের টক শোয় অংশ নেওয়া সরকারের একজনের কাছে এ প্রশ্ন করেছিলেন। ওই ব্যক্তি উত্তর দেননি। কেউ দিতেও পারবে না। সবাই জানেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নির্বাচন পর্যন্ত। কিন্তু সেই নির্বাচন নিয়েও কেউ কেউ সংশয়ে আছেন।
দেশে কোনো সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা দেননি উল্লেখ করে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে হবে। বিগত সরকার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে গিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল। এরপর শিক্ষকদের আন্দোলন করতে হয়েছে। পদক্রমে একজন সচিবের নিচে একজন অধ্যাপক কেন থাকবেন, এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে, শিক্ষাটা অগ্রাধিকার থেকে ছুটে গেছে। কোথায় গেছে বলতে পারি না, আপনারাও জানেন। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত, কিছু কিছু কাজ তারা করেছেন, যা সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু পুনর্গঠন চাইছি না, আমরা রূপান্তর চাইছি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে। রূপান্তর শুধু বই ছাপালেই বা শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করলে আসবে না। শিক্ষার্থীদের নীতিবান মানুষ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার্থী বানিয়ে নয়, শিক্ষার্থীকে মানুষ করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, গত ১৩ মাস ধরে শিক্ষা নিয়ে দেশে কেউ কথা বলে না। পরীক্ষা নিয়েও কিছু একটা বলে না। কোভিডের সময় দেখলাম অটোপাস দেওয়া হয়েছে। এসব আমাদের শিক্ষার মানকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ জানে। কয়েক বছর আগে দেখলাম নিরীক্ষকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে। এসব আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তিনি বলেন, আমাদের আজকের যে অধঃপতন, এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি নীতিনির্ধারকরা আর আমাদের যারা জড়িত ছিল। এ দেশের বড় সমস্যা শিক্ষিত মানুষ। অশিক্ষিত গরিব মানুষ এ দেশের সমস্যা না। ওরা কেউ এই চেয়ারে বসে না, আমরা যারা এই চেয়ারে বসি তারা দায়ি।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার আমাদের যে স্তরগুলো আছে, এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এ দেশে সরকারি খাতের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি খাত বিগত ৩০-৪০ বছরে বেশ উন্নতি করেছে। সেটাকে কীভাবে আরও মানসম্মত করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে।
আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার একটি স্বাধীন স্বাস্থ্য কমিশনের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি হলে স্বাস্থ্য সংস্কারের প্রস্তাবনাগুলো স্বতন্ত্রভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে রোগীদের পা রাখার জায়গা নেই। উপজেলা লেভেলের হাসপাতালগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগরের ভিসি ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েকটি সিন্ডিকেট ইলেকশনে একজন শিক্ষককেও খুঁজে পাওয়া যায়নি, যিনি অন্য রাজনৈতিক প্লাটফর্মকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাহলে কি সব মেধাবী এক জায়গায় ছিল? অথবা আমরা এমন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি যারা এতটাই ভীতু নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করার সাহস রাখে না। এমন একটা সমাজে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার-ই বা কী আছে?
সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ড. মামুন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেসের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারাসহ আরও অনেকে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন