শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

মানিকগঞ্জে ভ্যাট কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট অভিযানের পর ব্যবস্থা না নিয়ে সমঝোতা

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

মানিকগঞ্জে ভ্যাট কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট অভিযানের পর ব্যবস্থা না নিয়ে সমঝোতা

মানিকগঞ্জে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানোর পর মালামাল জব্দ করে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের  বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া লাখ লাখ টাকার বিড়ি-সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য জব্দ করা হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ না করে তাদের অফিসে ডেকে এনে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করেন ভ্যাট অফিসের এসব অসাধু কর্মকর্তা।

জানা গেছে, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম, রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান, মো. মোমিনুর রশিদ, আব্দুল হালিম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শুধাংশু কুমার বর্মন, অরবিন্দ মালি, আমিনুর রহমান ও সিপাহি মোমিন ইসলাম এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৈতরা বাজার ও সিংগাইর উপজেলার জামশা বাজারে অভিযান চালায় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের একটি দল। অভিযানে কৈতরা বাজারের আমেনা স্টোর থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকার দেশি-বিদেশি অবৈধ সিগারেট জব্দ করা হয়। তবে সেসব সিগারেটের জব্দ তালিকা না করে নিয়ে আসা হয় ভ্যাট অফিসে।

দোকান মালিক মো. সামসুল ইসলাম বলেন, আমি বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে সিগারেট কিনে সেগুলো বিক্রি করি। সেগুলো ভ্যাট দেওয়া হয়েছে নাকি দেওয়া হয়নি, তা তো আর আমরা জানি না। আমার দোকানে অভিযান চালিয়ে দেড় লক্ষাধিক টাকার সিগারেট নিয়ে গেছে। কী কী সিগারেটের কত প্যাকেট নিয়েছে, তার তালিকা আমাকে দেয়নি। বিদেশি সিগারেটের সাথে অনেক দেশি সিগারেটও নিয়ে গেছে। সেগুলো বৈধ নাকি অবৈধ কোনো কিছু দেখার সুযোগই দেয়নি। এভাবে করলে আমরা ব্যবসা করব কীভাবে?

এর আগে, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোস্তা এলাকায় অভিযান চালায় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভ্যাট অফিসের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম। অভিযানে চান মিয়া স্টোরে ৫০ লক্ষাধিক টাকার ভ্যাট চালানবিহীন বিপুল পরিমাণ সিগারেট ও বিড়ি পাওয়া যায়। তবে সেগুলো জব্দ না করে দোকান মালিককে অফিসে দেখা করতে বলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) অরবিন্দ মালি। একই সাথে সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিউটি কোম্পানির প্রতিনিধিদেরও অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

দোকান মালিক চান মিয়া জানান, সিগারেট জব্দ করার পর ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা অফিসে যেতে বলেছিল। কিন্তু কোম্পানির পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাট অফিসে যাইনি।

ভ্যাট অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি অভিযান চালায় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। অভিযানে গত ১৩ মে খালপাড় এলাকায় এসএ পরিবহন থেকে ২২ কার্টন সিগারেট, ৩০ জুন আলামিন ও জনি স্টোর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ও নকল সিগারেট, ৬ ও ২০ আগস্ট আবারও অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়। এরপর গত সপ্তাহে গিলন্ড বাজার থেকে ২২ কার্টন ‘টাইম চেঞ্জ’ নামের সিগারেট জব্দ করা হয়।

ইতিপূর্বে জব্দকৃত বিভিন্ন সিগারেটের প্যাকেটে থাকা ব্যান্ডরোল বৈধ কিনা যাচাইয়ের জন্য নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষাগারে। নমুনা পরীক্ষায় বিউটি কোম্পানির বারবি, বিউটি গোল্ড, সেনোর গোল্ড ও ওশান ক্যাপ্টেনসহ বিভিন্ন সিগারেটের প্যাকেটে থাকা ব্যান্ডরোলগুলো নকল বলে প্রমাণিত হয়। এরপর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সেসব প্রতিষ্ঠান ও মালিকের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করাতে দেখা যায়নি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের কর্মকর্তাদের।

নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো ব্যান্ডরোল নকল প্রমাণিত হওয়া ও বিদেশি সিগারেট জব্দ করার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা কিংবা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, জব্দকৃত পণ্য দেখিয়ে অভিযুক্তদের অফিসে ডেকে এনে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে সমঝোতা করা হয়।

আইন অনুযায়ী, সিগারেট অথবা বিড়ির স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল নকল করে একজন উৎপাদনকারী মূসক ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি প্রদান বা প্রদানের যদি চেষ্টা করেন, সে বিবেচনায় এ ধরনের কর্মকা- সম্পাদনকারী কোনো করদাতার বিরুদ্ধে ধারা-১১১ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা যায়। এ ছাড়া করদাতা স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল নকল করে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিলে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ধারা-২৫ (ক) মোতাবেক মামলা করার বিধান রয়েছে। এ ধারায় মামলা প্রমাণিত হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ মৃত্যুদ- বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদ- বা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হতে পারেন।

এসব বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান ও মো. মোমিনুর রশিদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য না করে বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এদিকে বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি এখন প্রস্তুত নই, এ বিষয়ে আপনাদের সাথে পরে কথা বলব।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!