শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

গুজবের মহামারির সময়েও প্রেরণার দ্বীপশিখা সশস্ত্র বাহিনী 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

গুজবের মহামারির সময়েও প্রেরণার দ্বীপশিখা সশস্ত্র বাহিনী 

নানা ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও দায়িত্ব পালনে অবিচল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। দেশের সংকটে, জনগণের স্বার্থে দরদি হৃদয় নিয়ে এগিয়ে আসা, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা তাদের ঐতিহ্যগত। রাজনীতি আর বিতর্কের ঊর্ধ্বেই বিচরণ। কালের স্রোতে এক আশ্চর্য বাতিঘর। মানবতাবোধে উদ্দীপ্ত থেকে শান্তি, মমত্ববোধ ও মৈত্রী অন্বেষণে দেশে দেশে তাদের প্রয়াস অক্লান্ত। নিজ দেশের দুর্দিনে কিংবা সময়ের প্রয়োজনে কখনো নির্লিপ্ত থাকেননি তারা। দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতার প্রশ্নেও তারা দৃঢ় অথচ নম্র এবং শান্ত। কাজের বিপরীতে কোনো হাঁকডাক নেই। একেবারে নীরবে-নিভৃতে নিজেদের দক্ষতা, মেধা ও দায়িত্বশীলতায় অনন্য হয়েই জনগণের মনের হীরক দ্যুতিতে তারা নিয়েছেন ঠাঁই। গত বছরের জুলাই-আগস্টে আত্মত্যাগের গণঅভ্যুত্থানেও সমান তালে ছড়িয়েছেন দীপ্তি। আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে মেঘের রুপালি প্রান্তের মতো জ্বলে উঠেছিলেন বিবেকের জাগ্রত কণ্ঠস্বর হয়েই। 

গত ১৩ মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতির ধারাকে রুখে দিতে হাল ধরেছেন সময়ে সময়ে। এক ধরনের শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা ছিল অহর্নিশ। দীর্ঘ এই সময়টিতে তাদের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন হয়তো একেকজন একেকভাবে করবেন। কিন্তু একবাক্যে সবাই স্বীকার করবেন অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনে তাদের সরাসরি অস্বীকৃতিই নির্ধারণ করে পতিত সরকারের ভবিষ্যৎ। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সার্থক পরিসমাপ্তি থেকে শুরু করে গণতন্ত্রে ফেরার অভিযাত্রায় তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা-বিবরণ অনাবশ্যক না হলেও ভবিষ্যৎ গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে। দেশমাতৃকার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রজ্বলিত হৃদয়ের অভিজ্ঞান নিঃসন্দেহে এই চিরন্তন সত্যকে বহন করে বয়ে চলবে কালান্তরে। বাঙালি জাতির অস্তিত্বের অন্তর্তল এমনভাবেই তাদের বীরোচিত ও সাহসী ভূমিকা স্পর্শ করে বলেই কি-না তা হয়ে উঠতে পারে অস্তিত্বের অনিবার্য এক পাঠ। দৃঢ়চিত্তে সগর্বে যারা জানিয়েছিল ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। অন্ধকারের পাদপীঠে তারা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন ভুবন আলো করা অনির্বাণ এক মঙ্গল প্রদীপ। 

একটু পেছন ফিরে তাকালে জুলাইয়ের শেষ থেকে আগস্টের প্রথমেই ‘এই মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনী সরকার’ স্লোগান চলছিল ঘুরেফিরে। জনমত এমন তুঙ্গে থাকলে স্বভাবতই ক্ষমতাকে আলিঙ্গন বিনা বাক্যে মেনে নেওয়ারই কথা। কোনো প্রশ্নও থাকত না। কারণ জনগণের ইচ্ছায় এমন পট পরিবর্তনে ধন্যি ধন্যি হতো চারপাশ। কিন্তু ক্ষমতা বা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার নেশা পেয়ে বসেনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীপ্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানকে। তারা তিনজনই একেবারেই ধীরস্থির ও বিচক্ষণ থেকেছেন সংকটময় প্রতিটি মুহূর্ত। বিতর্ক বা নাটকীয় কোনো ইতিহাসের ধারাপাত রচনা না করে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে পূর্ণ সহায়তা দিলেন। 

কোনো লোভের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেননি। তিন বাহিনী প্রধান কখনো নিজেদের অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবেও দাবি করেননি। কোনো বিষয়ে ক্রেডিট নিয়ে নিজেদের সস্তা প্রচারণার বিষয়বস্তু করাটাও যেন তাদের একেবারেই নীতি বিরুদ্ধ। সহজ ভাষায় তাদের অভিধানে নেই। অভিজ্ঞতা, সমন্বয় ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী এই মানুষেরা নিজ নিজ বাহিনীতে নিজেদের দায়িত্বকালীন পুরোটা সময় সংকট আর নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেছেন। ভবিষ্যৎ নীতিকৌশল ঠিক করতে নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন অসাধারণ বলিষ্ঠতায়। কালোত্তীর্ণ করেছেন নিজেদের। পর্দার আড়ালের শক্তিকেও রুখে দিয়েছেন। সুরক্ষিত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারকে। 

অথচ সরকার টিকবে না কত প্রচারণা-ছক অভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তির। কিন্তু দুর্বল-সবল সব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়েই এক বছর অতিক্রম করেছে সরকার। অনেকেই নানা তত্ত্ব হাজির করে বলেছেন- পরিস্থিতি এর চেয়েও ভালো হতে পারত। কিন্তু তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি এর চাইতেও প্রতিকূল হতে পারত। বলতে অবশ্য দ্বিধা থাকা উচিত নয়- গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লেও জননিরাপত্তার উদ্বেগজনক সব পরিস্থিতিও সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর নরম-গরম কৌশলের কারণেই। বন্ধুর মতোই তারা দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। তারা দেখিয়েছেন ভালোবাসা দিয়েই জনগণের হৃদয় জয় করা সম্ভব। মব সন্ত্রাস নিয়ে নানা কথা উঠলেও সরকারের কঠোর নির্দেশেই মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কুড়িয়েছে প্রশংসা। 

গত এক বছরের পথপরিক্রমায় সবচেয়ে বড় উদ্বেগ জাগিয়েছে দেশপ্রেমী সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশে ও দেশের বাইরে থেকে পরিকল্পিত গুজব সন্ত্রাস। বিশ্বজুড়ে যাদের গৌরবগাথা চির কল্যাণের পথ দেখিয়েছে সেই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই বাহিনীটিকে নিয়ে গুজবের মহামারি থামেনি এখনো। বারবার বিভিন্ন শক্তির লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন তারা। ঘৃণা-বিদ্বেষ-অসহনশীলতায় লালিত সময়ে তাদের নিয়ে অপপ্রচার রীতিমতো নিষ্ঠুর, অফলপ্রসূ, ধিক্কৃত ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এরপরেও তারা ধৈর্য ধরেছেন, কোনো উসকানির ফাঁদে পা দেননি। কিন্তু এটি কী প্রাপ্য ছিল সশস্ত্র বাহিনীর? ব্লেম-গেম ও আত্মঘাতী রাজনীতির চিন্তাধারা বাদ দিয়ে সবারই উচিত ছিল নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে যেসব জুলাই শহিদেরা আশা ও আদর্শের প্রদীপ প্রজ্বালিত করেছিল তাতে স্নাত হয়ে তাদের রক্তে ভেজা বাণী অনুধাবন করেই সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে তোলা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, দেশের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজনীতির আকাশে এখনো সশস্ত্র বাহিনী প্রেরণার দ্বীপশিখা জ্বালিয়ে চলেছে প্রতিক্ষণ। মানবতার জন্য, সত্য ও ন্যায়ের জন্য তাদের আত্মত্যাগ ও অপরিসীম প্রয়াসকে ভালোবাসার অর্ঘ্যে হৃদয়ের মর্মমূল থেকেই সম্মান জানাতে হবে। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র মাস কয়েক বাকি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী। জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রায় ১৬ বছর পর এবার নিজেদের হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে যাচ্ছে আমাদের আশা-ভরসার মূর্ত প্রতীক এই বাহিনী। এই নির্বাচনে প্রধান ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হবে সশস্ত্র বাহিনী। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গত এক বছরের বেশি সময়ে সশস্ত্র বাহিনীই জাতির হতাশার উপকূলে আশার বাতিঘর হিসেবে নিজেদের প্রতিভাত করেছে। এই অবস্থায় কোনোভাবে নজিরবিহীন মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলকে দুর্বল করা যাবে না। এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে না। একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ পাবে দেশ। সমৃদ্ধির বন্দরে নোঙর করতে এই বার্তাই জোগাতে হবে আমাদের সবাইকে। 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান 
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সন্ধানী বার্তা

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!