শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০২:৫৭ এএম

গরিবের কার্ড ধনীদের ঘরে

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০২:৫৭ এএম

গরিবের কার্ড ধনীদের ঘরে

  • উচ্চবিত্তদের মধ্যে টিসিবি কার্ড বিতরণ, প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত
  • দিনমজুর পরিচয়ে ব্যাংক-শিক্ষা বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী
  • নতুন তালিকায় প্রতিবন্ধী, বিধবা ও দরিদ্রদের নাম বাদ পড়েছে

রাজশাহীতে বিভিন্ন উচ্চবিত্ত পরিবারের মধ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড প্রদান করা হয়েছে। অথচ নি¤œবিত্ত পরিবারের মধ্যে এই কার্ড সুবিধা না থাকায় তারা কষ্টে দিনযাপন করছেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের বাড়ি, গাড়ি থাকা সত্ত্বেও এই কার্ড প্রাপ্তি স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজশাহী মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক পরিবারের বাড়ি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও দিনমজুরের তালিকায় যোগ হয়ে টিসিবি কার্ড গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। 
এতে প্রকৃত দুস্থরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 


অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ফজলুর রহমানকে দিনমজুর পরিচয়ে টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ তার রয়েছে তিনতলা বাড়ি। ওয়ার্ডের অভিজাত এলাকা ব্যাংক কলোনির আমির হামজা রোডের ২ নম্বর বাড়িটি তার।


যোগাযোগ করা হলে ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তিনি কার্ডের আবেদন করেছিলেন। তবে কেন পেশা হিসেবে দিনমজুর লেখা হলো জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 


রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তাজবুল হকও কার্ড পেয়েছেন। দাসপুকুর মোড়ের জব্বারের মহল্লায় তার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। তার চার ছেলেকে তিনি একই পাড়ায় চারটি আলাদা বাড়ি করে দিয়েছেন। বড় ছেলে শামিম বর্তমানে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে চাকরি করছেন। তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।


ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলামও দিনমজুর পরিচয়ে কার্ড পেয়েছেন। অথচ শহরের নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় তার বড় হোটেল আছে এবং দাসপুকুর মহল্লায় রয়েছে তিনতলা বাড়ি। তিনি প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন বলেও জানা গেছে।


এলাকাবাসীদের অভিযোগ বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্তরা কীভাবে গরিবের কার্ড পেলেন, তা তাদের কাছে বিস্ময়কর। এটির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। 


কাজী নাজমুল কবির নামে এক ব্যক্তি জানান, রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমিতে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেন, তিনিও কার্ড পেয়েছেন। তার কার্ডেও পেশা হিসেবে দিনমজুর লেখা হয়েছে। তবে, তার জাতীয় পরিচয়পত্র মহল্লার লোকজন নিয়েছিলেন। কার্ডে কোন পেশা লেখা হয়েছে, তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন। 


এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিটি করপোরেশন পুরোনো কার্ড বাতিল করে নতুন তালিকা তৈরি করে। এ তালিকা তৈরিতে দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে ২ হাজার ৫৩০টি কার্ড রয়েছে, যার মধ্যে কিছু সম্প্রতি বিতরণ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে নতুন তালিকায় প্রকৃত দুস্থদের বাদ দিয়ে সচ্ছলদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন গরিব, দিনমজুর, বিধবা, এমনকি প্রতিবন্ধীরাও।
প্রতিবন্ধী মাসদার আলী (৫০) জানান, তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাজারে ঝাড়ু দেন এবং মাস শেষে পান মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আগে তার টিসিবির একটি কার্ড ছিল, এবার তা বাতিল করা হয়েছে।
আজাদ আলী (৬০) জানান, তিনি নানা অসুখে ভুগতে ভুগতে এখনো রংমিস্ত্রির কাজ করেন। সংসারে সচ্ছলতা থাকলে তাকে এ বয়সে কাজ করতে হতো না। তার কার্ডটিও এবার বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কার্ডের তালিকা বাতিল ও নতুন তালিকা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে নগরের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ২৫ জুন, ৮ আগস্ট এবং সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর তিন দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।


সালমগীর হোসেন বলেন, ‘তালিকা বাতিল করে নতুনভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে কার্ড প্রণয়ন না হলে গরিব, প্রতিবন্ধী এবং অসহায় মানুষের অধিকার বঞ্চিত হতে থাকবে। আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে অচিরেই কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব বলে উল্লেখ করেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!