শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:১১ এএম

আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে সংকট দূর করতে হবে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:১১ এএম

আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে সংকট দূর করতে হবে

ভারতের আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেড (এপিজেএল)-এর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা ছিল। বলা হয়েছিল, এ চুক্তি একতরফা, অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। আজ সেই আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিয়মিত বকেয়া পরিশোধ করেও বাংলাদেশকে বারবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এককালীন বকেয়া আদায়ের নামে উৎপাদন বন্ধ করে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে শুধু বিদ্যুৎ খাত নয়, বরং দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর অভিযোগ, আসলে চুক্তি ভঙ্গ করছে আদানি নিজেই। নির্ধারিত অস্ট্রেলিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার কয়লার পরিবর্তে দেশীয় কয়লা ব্যবহার করেও তারা বেশি দাম দাবি করছে। তুলনামূলকভাবে পায়রা, রামপাল বা বাঁশখালী কেন্দ্র অনেক কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। অথচ আদানির ক্ষেত্রে প্রতি টন কয়লায় ১৬-২১ ডলার পর্যন্ত বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে। এভাবে চুক্তিকে ব্যবহার করে অস্বাভাবিক মুনাফা আদায় নিঃসন্দেহে অন্যায্য।

সাবেক সরকারের সময় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ভারতের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানিকে সুবিধা দিতে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তখনই ৩০ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি, আর সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়নি। এই পেক্ষাপটে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তবু ভারতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২৫ বছরের জন্য একচেটিয়া বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। আজ সেটিই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তিটি অসম, বৈষম্যমূলক এবং সংশোধনযোগ্য। এই চুক্তিতে অনেক ধরনের বাড়তি খরচ ধরা হয়েছে। পদে পদে সুবিধা নিয়েছে তারা। এর ফলে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার নিয়ে যাচ্ছে আদানি। অস্ট্রেলিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার কয়লার নাম করে তারা দেশি কয়লা ব্যবহার করছে। এতে করে তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এটি একটি একতরফা চুক্তি, সেই সুযোগটাই নিচ্ছে আদানি। এই চুক্তি থেকে অবিলম্বে সরে আসা প্রয়োজন সরকারের।

পিপিএ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে শুরু করে কয়লার দর নির্ধারণ, সব ক্ষেত্রেই আদানিকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে এমন একটি চুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এখন করণীয় কী? প্রথমত, সরকারকে স্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলেও চাহিদা কমায় খুব একটা প্রভাব পড়ছে না বলে জানিয়েছে পিডিবি। তাই আদানির বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলেও জাতীয় গ্রিডে সরবরাহে সংকট দেখা দিচ্ছে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশ কোনোভাবেই জিম্মি হয়ে থাকবে না, এ বার্তাই দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব হলে ভালো, নচেৎ আইনি ও কূটনৈতিক পথে অগ্রসর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

বিদ্যুৎ একটি কৌশলগত খাত। এ খাতে একতরফা চুক্তি, দুর্বল দরকষাকষি বা রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ দেওয়া মানে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনকে বিপদে ফেলা। অতএব, বর্তমান সংকট থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যে কোনো চুক্তিতে সর্বাগ্রে স্বচ্ছতা, প্রতিযোগিতা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।

আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি আজ প্রমাণ করেছে, একটি রাষ্ট্রকে বিদেশি কোম্পানির হাতে জিম্মি করা কতটা ভয়াবহ হতে পারে। তাই এখনই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ, জনস্বার্থ এবং দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার স্বার্থেই আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে সংকট দূর করতে হবে।

আমরা মনে করি, আদানি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বর্তমান সংকটকে কেবল একটি চুক্তিগত সমস্যা হিসেবে না দেখে, সামগ্রিক জ্বালানি নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। স্বচ্ছতা, কূটনৈতিক দক্ষতা এবং জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করাই হবে রাষ্ট্রের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!