- সেপ্টেম্বরে সড়কে নিহত ৪১৭ জন, আহত ৬৮২
- মোটরসাইকেলে নিহত ১৪৩ জন
- সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে
- অতিরিক্ত গতির কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা
চলতি বছরের গত আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি। গত সেপ্টেম্বর মাসে ৪৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৬৮২ জন। এর মধ্যে ১৫১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৪৩ জনের। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। নিহত মানুষের হার ৩৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর আগে গত আগস্ট মাসে সারা দেশে ৪৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৮ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৩২ জন, যা মোট নিহতের ৩০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিভাগের সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। আর সবচেয়ে কম মাগুরা জেলায়।
সংস্থাটির সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৭ জনের মধ্যে ৬৩ জন নারী ও ৪৭টি শিশু। এ সময় সড়কে ১১২ জন পথচারী নিহত হয়েছে। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৬ জন। সেপ্টেম্বরে ১৭টি নৌ দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ২৯টি রেল দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬ শতাংশ বা ১৬১টি। আঞ্চলিক সড়কে ৩১ শতাংশ, গ্রামীণ সড়কে ১৩ শতাংশ এবং শহরে ২০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে, ২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে এবং ২৭ শতাংশ পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায়।
যানবাহনভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ও ট্রাক্টরসহ ভারী যানবাহন জড়িত ছিল ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ ঘটনায়। মোটরসাইকেল জড়িত ছিল ২৪ শতাংশ, বাস ১৮ শতাংশ এবং থ্রি-হুইলার ১৫ শতাংশ দুর্ঘটনায়।
বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। বিভাগটিতে ১২৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৪ জন। এরপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটে। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটে। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৫২টি দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম মাগুরা জেলায়। এ জেলায় আটটি দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দুর্ঘটনার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতি, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন না মানা এবং দুর্বল তদারকি। এ ছাড়া মহাসড়কে স্বল্প গতির যান চলাচল এবং পরিবহনে চাঁদাবাজিও অন্যতম কারণ।
দুর্ঘটনা রোধে সংগঠনটি ১০টি সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ চালক তৈরি, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, ট্রাফিক আইন কঠোর বাস্তবায়ন, মহাসড়কে ধীরগতির যান চলাচল বন্ধ, বিকল্প সার্ভিস রোড নির্মাণ ও সচেতনতা কার্যক্রম বৃদ্ধি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। প্রযুক্তির মাধ্যমে গতি পর্যবেক্ষণ ও চালকদের মানসিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা জরুরি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন