ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে আটক দেখানো একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ছবিটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় বা এআই-জেনারেটেড বলে নিশ্চিত করেছে দেশীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানার তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সামরিক পোশাকে সজ্জিত সশস্ত্র ব্যক্তিদের দ্বারা বেষ্টিত শহিদুল আলমের মতো দেখতে এক ব্যক্তির যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি কোনো বিশ্বাসযোগ্য বা অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায়নি। গাজায় ত্রাণ মিশন আয়োজনকারী আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) যাচাইকৃত এক্স (টুইটার), ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব অ্যাকাউন্টেও এই ছবিটির কোনো অস্তিত্ব ছিল না।
এর আগে শহিদুল আলমের প্রতিষ্ঠান দৃক জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি সময় বুধবার সকাল ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) আন্তর্জাতিক জলসীমায় গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল (২২০ কিলোমিটার) দূরে ‘কনসেশন্স’ জাহাজসহ ফ্লোটিলার আটটি জাহাজ ‘সহিংসভাবে জব্দ’ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র অধীনে ৪০টিরও বেশি ত্রাণবাহী জাহাজ গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করেছিল। ইসরায়েলি বাহিনী সেই জাহাজগুলোকে বাধা দেয় এবং জাহাজে থাকা ৪০০ জনেরও বেশি কর্মীকে আটক করে। গত ১ অক্টোবর ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন এবং থাউজেন্ড ম্যাডেলিনস টু গাজার (টিএমটিজি) ব্যানারে আরও ১১টি জাহাজের একটি বহর গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
‘টাইমস অব ইসরায়েল’-এর একটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে ফ্লোটিলাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং জাহাজগুলো ও যাত্রীদের ‘আশদোদ বন্দরে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সব যাত্রী নিরাপদ ও সুস্থ আছেন এবং তাদের দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
রিউমর স্ক্যানার লক্ষ করেছে, টাইমস অব ইসরায়েল বা ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেউই ভাইরাল হওয়া কথিত ছবিটি প্রকাশ করেনি। ছবিটি নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করার পর সংস্থাটি এআই-জেনারেটেড ছবিতে সাধারণত যে ধরনের অসঙ্গতি থাকে, তা চিহ্নিত করেছে।
ফ্যাক্ট-চেকাররা বলছেন, ছবিতে সশস্ত্র ব্যক্তিদের মুখ, শারীরিক গড়ন এবং অঙ্গভঙ্গিগুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক মিল রয়েছে, যা ডিজিটাল প্রতিলিপি বা এআই-জেনারেটেডের ইঙ্গিত দেয়।
গত ৪ অক্টোবর শহিদুল আলম তার ফেসবুক পেজে ‘কনসেশন্স’ জাহাজে সহযাত্রীদের সঙ্গে তার একটি যাচাইকৃত ছবি শেয়ার করেছিলেন। সেই ছবিতে তাকে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ছাত্র আবু সাঈদের প্রতিকৃতিযুক্ত একটি কালো পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। কিন্তু ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে শহিদুলকে ভিন্ন পোশাকে দেখা যায় এবং তার পোশাকে আবু সাঈদের প্রতিকৃতির অবস্থান বিপরীতভাবে দেখা যায়Ñ যা এআই ব্যবহার করে ছবি তৈরি করার সময় দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার আরও জানায়, ‘হাইভ মডারেশন’ নামের এআই-ডিটেকশন টুল ব্যবহার করে ভাইরাল হওয়া ছবিটি তৈরি করা হয়েছে, যার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ রয়েছে।