বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে তার কার্যালয় ঘেরাও করে আন্দোলন করেছেন সোসাইটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। গতকাল রোববার এই আন্দোলনের মধ্যেই সোসাইটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি চেয়ারম্যান সমর্থকরাও কার্যালয়ে অবস্থান করেন। ফলে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আন্দোলন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ভেতরে পুলিশ, সাংবাদিক, আন্দোলনকারী ও আন্দোলনের বিপক্ষের সবাই ছিলেন।
এ বিষয়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। তবে প্রতিষ্ঠানটির যুব বিভাগের উপ-পরিচালক মুনতাসির মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর এ চেয়ারম্যানকে আমরা চাই না। আমাদের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলমান আছে। আমাদের মোকাবিলায় চেয়ারম্যান ফ্যাসিস্ট সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়ো করেছেন এবং পুলিশ নিয়ে এসেছেন।’
এর আগে গত বুধবার সকাল থেকে রেড ক্রিসেন্টের সদর দপ্তরে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রায় শ’খানেক লোক জড়ো হয়ে রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের দপ্তর ঘিরে সেøাগান দেয়। এমনকি চেয়ারম্যান অফিস ত্যাগ করার সময়ও তার গাড়ি ঘিরে সেøাগান দেওয়া হয়।
রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক ও যুব কমিটির একজন বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম আসার পর থেকেই রেড ক্রিসেন্টে ভালো কর্মকর্তাদের সাইডে রাখা হয়েছে। আমাদের ভালো স্বেচ্ছাসেবকদেরও সাইড করে ফেলেছে। তার পক্ষের একটা অংশকে প্রাধান্য দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিতর্কিত ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতিকেও পরিচালক করেছে। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, মারতে তেড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের ঘটনা চেয়ারম্যান ঘটিয়েছেন। রেড ক্রিসেন্টের ইতিহাসে এমন নিকৃষ্ট চেয়ারম্যান আসেনি। যার কারণে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিবাদ করছে। তবে আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। দুই গেটে বহিরাগত এনে আমাদের দমনের চেষ্টা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করে ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিবাদ করেছি। আমরা ফ্যাসিবাদের লালনকারী চেয়ারম্যান চাই না।
মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবেই পরিচিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। গণমানুষকে স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্য থেকে শুরু করে নারী কেলেঙ্কারি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার প্রশ্রয় রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সংস্কারের পরিবর্তে দলীয়করণের পথেই হাঁটছে নতুন বোর্ড। নারীর হেনস্তা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাদের পদোন্নতি, অনিয়ম করে নিয়োগ, ইচ্ছেমতো বেতন নির্ধারণসহ পুরোনো অনিয়মেই ডুবে আছে সংস্থাটি। এমনকি, আওয়ামী লীগের আমলে শাস্তি পাওয়া দুর্নীতিবাজদেরও প্রশ্রয় দিচ্ছে সংস্থাটির নয়া বোর্ড। এসব বিষয়ে বুঝে না বুঝে সায় দিচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান।
এসব বিষয়ে বিব্রত দাবি করে চেয়ারম্যান এর আগে রূপালী বাংলাদেশকে বলেছিলেন, ‘কিছু বিষয়ে ব্যত্যয় আছে এখানে। আমি আসার পর নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছি। নানা অভিযোগও পেয়েছি। স্বচ্ছতার জন্য আমি বিষয়টি দুদককে দিয়ে দিয়েছি। তারা তদন্ত করে দেখুক।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন