রাজনৈতিক কর্মসূচির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, তবে বেশির ভাগই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝটিকা মিছিলের ভিডিও ছড়াচ্ছে, বাস্তবে তেমন কিছু নয়Ñ এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, অনেকে নাইটকোচে এসে অল্প সময়ের জন্য ব্যানার দেখিয়ে ভিডিও করে ফেসবুকে দেয়। এতে মনে হয়, বড় মিছিল হলো; কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু না। সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি আমরা অস্বীকার করতে পারি না, তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ডিএমপি-জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) আয়োজনে ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসপি) সমাপনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ১৭ বছরে বড় ধরনের কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি। ফলে পুলিশে বর্তমানে কর্মরত দুই লাখ সদস্যের প্রায় অর্ধেকই এই সময়ে নিয়োগপ্রাপ্তÑ যাদের অনেকেই কখনো ভোট দেননি বা নির্বাচনের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। সামনে একটি নির্বাচন আসছে, পুলিশ তার দায়দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ডিএমপি প্রধান বলেন, আমাদের অনেক সদস্য জানেনই না, নির্বাচনে দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হয়। তাই আমরা সারা দেশে ট্রেনিং কার্যক্রম চালাচ্ছিÑ ডিএমপিতেও চলছে। আমি সব সময় আমার অফিসারদের বলছি, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে ১০০ শতাংশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এবারের নির্বাচন ঘিরে একটি ‘নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য’ পরিবেশের আশা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলটি (আওয়ামী লীগ) এবার অংশ নিতে পারছে না, তাই তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ডিএমপি কমিশনার।
আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি দল নিষিদ্ধঘোষিত। তারা ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতার চেষ্টা করছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি যেন কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা- না ঘটে। নভেম্বরের শেষ দিকে দেশে একটি ‘চমৎকার নির্বাচনি পরিবেশ’ তৈরি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, এখন সবাই নির্বাচনমুখী। জনগণ ভোট দিতে চায়। এমনকি যাদের বয়স ৩৫-৪০, তারাও জীবনে ভোট দেয়নি, এটি আমাদের দেশের জন্য দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সক্ষমতা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট।
ঢাকা মহানগরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে যানজট অন্যতম। যানজটের কারণগুলো অনুসন্ধান করে তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। নগর পরিকল্পনায় দূরদর্শিতার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ জনগণ সড়ক পরিবহন আইন মেনে চললে এবং সচেতন থাকলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ মি. তোমোহিদে ইচিগুচি বলেন, ডিআরএসপি শুধু একটি প্রজেক্ট নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা। ঢাকা মহানগরীর সড়ক অধিকতর নিরাপদ করার প্রত্যয়ে ২০২১ সালে এই প্রজেক্টের যাত্রা আরম্ভ হয়। এই প্রজেক্টের আওতায় ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তিনি সন্তোষ জ্ঞাপন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ জাপানের অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রহণকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ, যার পরিমাণ বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার এবং ভবিষ্যতেও জাইকা বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, সড়ক নিরাপত্তা এমন একটি প্রক্রিয়া, যা সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে শুরু হয়, সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং টেকসই অঙ্গীকারের মাধ্যমে সফল হয়।
জাইকা সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সড়ক নিরাপত্তায় গণসচেতনতা বাড়াতে ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৪০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।