‘প্রতিটি মিনিটই মূল্যবান’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে গতকাল বুধবার দেশজুড়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রোক মূলত একটি অসংক্রামক রোগ, যার মূল কারণ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, জাংক ফুডে আসক্তি, অ্যালকোহল পান। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০ অনুযায়ী, মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর মধ্যে স্ট্রোক দ্বিতীয়। দেশে বছরে ১৮ লাখের বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। শুধু তাই নয়, প্রতি চারজনে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, স্ট্রোক মস্তিষ্কের অসুখ। কোনো কারণে যদি মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তক্ষরণ বা রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক থেকে প্যারালাইসিস, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রথম শীর্ষ কারণের মধ্যে রয়েছে হার্ট অ্যাটাক, যা মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে ব্রেইন স্ট্রোক (১০ শতাংশ)।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির আধিক্য, ধূমপান, অ্যালকোহল পান, ওজন বেশি, শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়া এবং শারীরিক অ্যাক্টিভিটিজ না থাকা মানুষই স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকলেও শিশুরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। আর স্ট্রোকের ঝুঁকিতে নারী-পুরুষ প্রায় সমান সমান বা কিছু কিছু কারণে পুরুষের ঝুঁকি বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতি চারজনে একজনের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর এটা যে কোনো বয়সে হতে পারে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মুখ-হাত বেঁকে যাওয়া, হাত দুর্বল হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে স্ট্রোকের লক্ষণ। সেই সঙ্গে কারও ব্যালেন্সে সমস্যা এবং চোখে দেখতে সমস্যা হওয়াও স্ট্রোকের লক্ষণ।
তাই সঠিক জীবনাচরণ ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর সঠিক ওজন, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার, ধূমপান পরিহার করা এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। সেই সঙ্গে চিকিৎসকেরা জোর দিয়েছেন স্ট্রোক হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার প্রতি। যত দ্রুত স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। কিন্তু দেরি হলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কিছু থাকে না।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, দেশে বছরে প্রতি হাজারে ১১ দশমিক ৪ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। সে হিসাবে ১৬ কোটি জনসংখ্যা ধরলে প্রতি বছর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় ১৮ লাখ ২৪ হাজারের বেশি মানুষ। তাই স্ট্রোক বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী স্ট্রোকের প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব স্ট্রোক সংস্থা প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর ‘বিশ্ব স্ট্রোক দিবস’ পালন করে।
ঢাকায় বর্তমানে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও ল্যাবএইড হাসপাতালে স্ট্রোক চিকিৎসার দুটি আধুনিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেগুলো হলো আইভি থ্রোম্বোলাইসিস (স্ট্রোকের সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োগযোগ্য) ও মেকানিক্যাল থ্রোম্বেক্টমি (৯ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োগযোগ্য)।
এ বিষয়ে নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. জালাল উদ্দীন রুমি বলছেন, যত দ্রুত রোগীকে শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যায়, তত দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই সচেতনতা ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপই জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি। স্ট্রোক প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সুস্থ জীবনযাপন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ। ডা. রুমি বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য, যদি আমরা সচেতন হই।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন