মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জনাব আলী, রাজশাহী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের রাজত্ব লোকসানে বড় ব্যবসায়ীরা

জনাব আলী, রাজশাহী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের রাজত্ব  লোকসানে বড় ব্যবসায়ীরা

ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কারণে ব্যবসা গুটানোর শঙ্কায় রয়েছেন রাজশাহীর বড় ব্যবসায়ীরা। কারণ বিনিয়োগ করে লাভ না হওয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হচ্ছে অনেকের। রাজশাহীর অনেক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে এসব হতাশার চিত্র তুলে ধরেন।

রাজশাহীর অসংখ্য ব্যবসায়ীই একই সমস্যায় পড়েছেন। ফুটপাতের দোকানদারদের ভাড়া, ভ্যাট বা ট্যাক্স না থাকায় তারা যেখানে-সেখানে দোকান বসিয়ে মূল ব্যবসায়ীদের লোকসানে ফেলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ফলে মূল ব্যবসায়ীরা বড় বিনিয়োগ করেও টিকতে পারছেন না।

রাজশাহী নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকা, কোর্ট বাজার, লক্ষ্মীপুর, তালাইমারী, বিনোদপুর, নওদাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানকার বড় ব্যবসায়ীরা ফুটপাত হকারদের কারণে তাদের ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ফুটপাতে দোকানের কারণে চলাচলের রাস্তাটি সরু হয়ে পড়েছে। এতে ফুটপাতের জন্য এসব এলাকায় দিন-রাত যানজট লেগে থাকছে। পথচারীরা ফুটপাত ব্যবহারের কোনো সুযোগ পান না বললেই চলে। ফুল-ফল, তালা-চাবি, লুঙ্গি, গামছা থেকে শুরু করেÑ এমন কোনো জিনিস নেই, যা এসব ফুটপাতের ব্যবসায়ীর কাছে পাওয়া যায় না। সব ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন হকাররা।

রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের মসজিদের নিচে ছিল প্রায় ৪৯ বছরের পুরোনো গেঞ্জির দোকান ‘বাবুল স্টোর’। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রসুল ওরফে বাবুলের মালিকানার দোকানটি গত ১ অক্টোবর বন্ধ হয়ে গেছে। বাবুল জানান, আগে দোকানটিতে গেঞ্জি, মোজা পাইকারি বিক্রি করতেন, পরে খুচরা শুরু করেন। এখন ফুটপাতেই এসবের ভূরি ভূর দোকান গজিয়েছে। ফলে ফুটপাত মাড়িয়ে মানুষ আর দোকানে ঢুকতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দোকানটি ভাড়া দিয়েছেন।

সাহেববাজারের মতো লক্ষ্মীপুর এলাকায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনের ফুটপাত দিয়েও হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই। হাসপাতালের সামনের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে দোকান আর হোটেলে। দক্ষিণ পাশে অন্তত ৯টি ভাতের হোটেল দিনরাত খোলা থাকে। রাস্তায়ই রুটি সেঁকা হয়। উত্তর পাশেও দোকানপাট নেমে এসেছে সড়কে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, অভিযান চালিয়ে ফুটপাত খালি করা হলেও পরদিনই আবার দোকান বসে যায়। ফলে সেখানে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, আর যানজটে রোগী আনা-নেওয়াও হয়ে উঠেছে কষ্টসাধ্য।

এভাবে রাস্তা-ফুটপাতের ওপর দোকান বসানোর জন্য কাউকে কোনো ভাড়া বা চাঁদা দিতে হয় কি না, তা জানতে চাওয়া হয় দক্ষিণ পাশের এক ভাতের হোটেলের মালিকের কাছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এই দোকান চালানোর জন্য কাউকে কোনো পয়সা দিতে হয় না। কেউ কেউ নিজেই জায়গার দখল নিয়েছেন। কেউ আবার দোকান চালাচ্ছেন আরেকজনের দখল করা জায়গার ওপর।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, এই সমস্যার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, র‌্যাব ও স্থানীয় ক্যান্টনমেন্টের জিওসিকেও তিনি চিঠি লিখেছেন, টেলিফোনে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এবং হাসপাতালে পেয়ে বিভাগীয় কমিশনারকে সামনাসামনি জানিয়েছেন। এখন তাদের কার্যক্রম দেখার অপেক্ষায় আছেন।

শামীম আহাম্মদ বলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তায় মাত্র ১০ জন পুলিশ ও ৪০ জন আনসার সদস্য আছেন। তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা না করলে তিনি একা বাইরের পরিবেশ ঠিক করতে পারবেন না।

নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বরে চপ, শিঙাড়া, পেঁয়াজু, ডালপুরিসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া বিক্রি হয়। দোকানের ওপর পলিথিন দিয়ে বড় করে চালা তৈরি করা হয়েছে। পাশেই কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে খাবার। দোকানের মালিক উজ্জ্বল হোসেন ১০ থেকে ১২ বছর ‘ফল ভা-ার’ নামে দোকান চালাতেন। বছরখানেক থেকে ভাজাপোড়ার দোকান করেছেন। তিনি দোকানে ছিলেন না। কাজ করছিলেন চার কর্মচারী। রয়েজ মিয়া নামের এক কর্মচারী বলেন, ‘এই চত্বরে ব্যবসার জন্য কাউকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না।’

সাহেববাজারে রাস্তার দক্ষিণ পাশে প্রায় অর্ধশত কাপড়ের দোকান আছে। তারা ফুটপাত থেকে নেমে রাস্তার ওপর চলে এসেছেন। লুঙ্গি-গামছার বড় দোকান নিয়ে রাস্তার ওপরে বসেন মো. বাদশা। তার ভাষ্য, প্রায় ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন, তার বাবা ৩৪ বছর করেছেন। তাকে কোনো অর্থ দিতে হয় না। অন্য কাউকে দিতে হয় কি না, তা তিনি বলতে পারবেন না।

নগরের গণকপাড়ার মোড়ে প্রশস্ত রাস্তা দখল করে জামাকাপড়ের দোকান বসানো হয়েছে। মোড়টিতে আফতাব হোসেন নামের এক বিক্রেতা ছোট বাচ্চাদের পোশাকের দোকান সাজিয়েছেন। তিনি বলছেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। এক জায়গা থেকে তুলে দেয়, আরেক জায়গায় যান। এখন এই মোড়ে ভ্যানের ওপর দোকান করছেন। কাউকে কোনো পয়সা দিতে হয় না।

রাজশাহী নগরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা-ফুটপাত দখল করে এভাবে ব্যবসার কারণে নিজেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সেকেন্দার আলী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, তারা সাত থেকে আট রকমের ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করেন। ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে পজিশন কেনেন, মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া গুনছেন। এখন তাদের ব্যবসাই চলছে না। সব ধরনের মালামাল নিয়ে ফুটপাতে বসে গেছে লোকজন। গত ১৫ বছরে অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ী নিজেদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দোকানভাড়া দিয়েছেন বা অন্য কোনো মালামাল তুলেছেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কিছু বলা যায় না; বললেই রাজনৈতিক প্রভাব দেখান। এ ছাড়া তাদের সিন্ডিকেট আছে। তারা নিজেরা টাকা তোলেন, কিন্তু সেই টাকা কোথায় যে যায়, তা বোঝা যায় না। এই অব্যবস্থাপনার দায় সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের। তারা এসব দেখেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান জানান, ফুটপাতে হকারদের একদিক থেকে তুলে দিলে আরেক দিকে গিয়ে বসে। এখন গ্রাম থেকেও প্রচুর হকার ফুটপাতে বসে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সাহেববাজারে তারা একটা তালিকা করে দিয়েছিলেন, যাতে এর বাইরে কেউ না বসতে পারেন। এ নিয়ে বিশ্ব বসতি দিবসের অনুষ্ঠানে তারা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এগুলো সিটি করপোরেশনেরই দেখা দরকার। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো সমস্যা হলে পুলিশ দেখবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। তাদের উচ্ছেদের জন্য সিটি করপোরেশনের অভিযান চলছে। আমরা নিয়মিত এ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!