পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে তার অন্তরঙ্গতা। তাকে পতিত দলটির নেতাদের সমর্থনের অডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অভিযোগ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায়ের। রয়েছে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি ও অনুমতি ছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলনসহ নানা অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগও। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি ভাগিয়েছেন গরুর হাটও। গড়েছেন চাঁদাবাজ বাহিনী- ‘চাঁদাভাই’। অনিয়ম-দুর্নীতির টাকায় হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। তিনি হলেন এম এ হান্নান।
আর তাকেই দেওয়া হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের বিএনপির মনোনয়ন। অভিযোগ উঠেছে এও, ‘টাকার জোরেই’ ভাগিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। তবে ‘বিতর্কিত’ এই ব্যক্তি মনোনয়ন পাওয়ায় তোলপাড় চলছে এলাকায়। অনেকেই এমন ঘটনায় হতবাক হয়েছেন। কারণ তাতে বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় দলের জন্য ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ হান্নানের কর্মকা-ের কারণে এরই মধ্যে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, দলের ইমেজ রক্ষায় প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার।
স্থানীয় একাধিক বিএনপির নেতা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এম এ হান্নান একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তার সঙ্গে রয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিবিড় যোগাযোগ। দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। এখন তার মতো ব্যক্তি মনোনয়ন পাওয়ায় স্থানীয় বিএনপিতে ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে। তাই আমরা মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করছি। পাশাপাশি যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করছি।’
স্থানীয় সূত্র ও দলীয় নেতাদের অভিযোগ অনুযায়ী, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর থেকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে মদদ দেওয়াসহ নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এম এ হান্নান। ওই সময় থেকে তিনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায়, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি, অনুমতি ছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলন ও অন্যান্য অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন।
তিনি উপজেলা সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে ‘চাঁদাভাই’ নামে পরিচিত একটি বাহিনী গঠন করেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে নাসিরনগর সদর বাস ও সিএনজিস্ট্যান্ড থেকে তার বাহিনী নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, গত ঈদুল আজহায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে উপজেলা সদর গরুর বাজারের ইজারা নেন হান্নান। যার মাধ্যমে তিনি অঢেল টাকা হাতিয়ে নেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, হান্নান উপজেলার প্রায় সব ইটভাটা থেকে মাসিক মাসোহারা নেন। এমনকি নিজের ভবন নির্মাণেও বিনা মূল্যে ইট ব্যবহার করেন তিনি।
এ ছাড়া সরকারি হাটবাজার, খাসপুকুর ও জলাশয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজের লোকদের মধ্যে ভাগ করে দেন এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, অপকর্মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন হান্নান।
তার বিরুদ্ধে অনিয়মই নয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অংশগ্রহণ করে তৃতীয় হন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কৃষক দলের আহ্বায়ক আমিরুল হোসেন চকদারের প্রায় ৭৯ শতাংশ ভূমি (মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা) জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন এম এ হান্নান।
এ ছাড়া, একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে আমিরুল হোসেনের পাসপোর্টও তিনি আটকে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দলীয় সূত্র ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনি বিএনপির উপজেলা সভাপতির পদকে ব্যবহার ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যক্তিগত লাভের আশায় ফসলি জমি থেকে এক্সক্যাভেটর মেশিনে মাটি কেটে বিক্রি করেন। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় ৩১ দফা বাস্তবায়ন সভায় আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ ‘খোকা হলো জাতির পিতা’ রচয়িতা সাবেক অতিরিক্ত সচিব মফিজ আহমদের (ফরিদ)-এর অর্থায়নে এম এ হান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের পক্ষে প্রচারণা চালান এম এ হান্নান। এমনকি তিনি সংগ্রামের কর্মীদের ফোনে উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘সংগ্রাম এমপি জিতলে নাসিরনগর কলেজ মোড়ে গরু জবাই করে খাওয়াবো।’
এসব বিষয়ে জানতে এম এ হান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

