মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:২৪ পিএম

তৃতীয় বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন-২০২৫

বাস্তবভিত্তিক জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন দাবি

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:২৪ পিএম

বাস্তবভিত্তিক জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন দাবি

** নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে নাগরিকদের ১৩ দফা ইশতেহার প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক দলগুলোর

** দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ১৩ দফা সম্বলিত নাগরিক ইশতেহার পাঠ

জলবায়ু সংকট ও অর্থনৈতিক ঝুঁঁকি মোকাবিলায় অবিলম্বে একটি বাস্তবভিত্তিক জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ, পরিবেশ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় এ মুহূর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। গতকাল সোমবার রাজধানীর সামরিক জাদুঘরে বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫-এর সমাপনী দিনে এ কথা বলেন বক্তারা। এদিন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ১৩ দফা দাবি সম্বলিত একটি নাগরিক ইশতেহার উপস্থাপন করা হয়। এ সময় বলা হয়, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিটি দলের নির্বাচনি ইশতেহারে এই নাগরিক দাবিনামা অবিলম্বে ও স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)-এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, প্রতি বছর আমরা ১২-১৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করি বিদ্যুৎ কেনার জন্য। আমরা কীভাবে এখান থেকে বের হয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি, সেই প্রত্যাশা আমাদের থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কায়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নজরুল হক প্রধান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক (ঢাকা দক্ষিণ) মঞ্জুর মঈন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার তুষার প্রমুখ।

সম্মেলনে ইশতেহার পাঠ করেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) নির্বাহী সদস্য মনোয়ার মোস্তাফা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬ এর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পক্ষে এই ইশতেহার উপস্থাপন করে ঘোষণা করেন যে, দেশের ভবিষ্যৎ সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে এসব দাবি বাস্তবায়নে বাধ্যতামূলক ও সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে।

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ন্যায্য রূপান্তর এখন আর কোনো তাত্ত্বিক ধারণা নয়, এটি জাতির জন্য একটি মৌলিক রাজনৈতিক ও অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমলাতন্ত্রের জটিল চক্রে পড়ে অনেক রাজনীতিবিদ পথ হারিয়ে ফেলেন, ফলে কথা কথাই রয়ে যায়। বৈশ্বিক প্রভাব ঠেকানো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এসব সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আমরা প্রকৃতির ওপর যত বেশি অত্যাচার করছি, ন্যায্য রূপান্তর থেকে আমরা ততটাই দূরে সরে যাচ্ছি। এই ভয়ংকর বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনীতি, রাষ্ট্র ও জনগণকে একসাথে দায়িত্ব নিতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আমরা ভালো কিছুর আশা করি, কিন্তু বাস্তবে এগিয়ে চলে সবচেয়ে ভয়াবহ অনিয়মের রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক ইশতেহারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটপাট বন্ধের স্পষ্ট দাবি যথাযথ বলে মনে করছি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে স্বীকৃত লুণ্ঠন চলছে, তার হোতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে শক্ত সংস্কার ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক (ঢাকা দক্ষিণ) মঞ্জুর মঈন বলেন, জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা কমানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশের জ্বালানির শক্তি নিরাপত্তার পথে উত্তরণ নিশ্চিত করা। আমরা বহুমুখী ও সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান চাই। তবে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ছাড়া এসব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

নাগরিক ইশতেহারের প্রধান দাবি ও সুপারিশ

১. নতুন জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন : জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাত মোকাবিলা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি নতুন জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এই নীতির আলোকে পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সব খাতভিত্তিক নীতি ও মহাপরিকল্পনা পর্যালোচনা ও প্রণয়ন করতে হবে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও জলবায়ু-সংক্রান্ত সব নীতি, পরিকল্পনা, আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের আগে নাগরিক সমাজ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বাধ্যতামূলক পরামর্শ নিতে হবে।

২. জ্বালানি খাতে দুর্নীতি দমন ও চুক্তির স্বচ্ছতা : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা সংশোধন করে সব চুক্তি তথ্য অধিকার আইনের আওতায় প্রকাশযোগ্য করতে হবে। প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নাগরিক পর্যবেক্ষণের আইনগত স্বীকৃতি দিতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তির বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিদ্যুৎ খাত থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি বাধ্যতামূলক : কয়লা, গ্যাস ও তেলের ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমিয়ে শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৩০% এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। নবায়নযোগ্য খাতে রূপান্তরে সহজ শর্তে ঋণ ও কর ছাড় দিতে হবে।

৪. নতুন জীবাশ্ম বিদ্যুৎকেন্দ্র নয় : কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক কোনো নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পুরোনো ও অকার্যকর বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে সেখানে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এসব কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অদক্ষ কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাতিল করতে হবে।

৫. নতুন এলএনজি টার্মিনাল নয় ও গ্যাস অপচয় রোধ : নতুন কোনো এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পুরোনো ও অকার্যকর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে সার উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হবে। শিল্পে গ্যাসের পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। গ্যাস লিকেজ ও অবৈধ সংযোগ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অপচয় রোধে সব খাতে গ্যাস মিটার স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৬. নবায়নযোগ্য শক্তির জাতীয় লক্ষ্য ও বাজেট : ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০%, ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০% এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১০০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার লক্ষ্য সব নীতি, পরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের কমপক্ষে ৪০% নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য বরাদ্দ করতে হবে। সৌর প্যানেল, ইনভার্টারসহ সব যন্ত্রাংশের ওপর ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক প্রায় শূন্যে নামাতে হবে।

৭. পরিবহন খাতে ইভি বিপ্লব : পরিবহন খাত দেশের দূষণের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। দ্রুত সবুজায়নের লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ওপর আমদানি শুল্ক ও কর অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের তুলনায় অন্তত ৭৫% কমাতে হবে। উন্নত ব্যাটারির (লিথিয়াম-আয়ন, সোডিয়াম-আয়ন, সলিড স্টেট) ওপর আমদানি কর শূন্যে নামাতে হবে।

৮. স্মার্ট গ্রিড ও ‘সূর্যবাড়ি’ কর্মসূচি : জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়ন করে স্মার্ট গ্রিডে রূপান্তরের জন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিতে হবে। ‘সূর্যবাড়ি’ কর্মসূচির আওতায় পারিবারিক ও কৃষিভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে (৩ কিলোওয়াট পর্যন্ত) ২৫% ভর্তুকি ও ৭০% স্বল্পসুদে ঋণ দিতে হবে। নারী, আদিবাসী, কৃষক, জেলে ও দরিদ্রদের জন্য অতিরিক্ত ১০% ভর্তুকি দিতে হবে।

৯. ২০ লাখ নতুন সবুজ কর্মসংস্থান : যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের মাধ্যমে ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এতে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

১০. ‘ভুল সমাধান’ নয়, সার্কুলার গ্রিন ইকোনমি : অ্যামোনিয়া কো-ফায়ারিং, কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজ, তরল হাইড্রোজেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও ওয়েস্ট-টু-এনার্জির মতো ব্যয়বহুল ও অনিশ্চিত প্রযুক্তি পরিহার করতে হবে। বর্জ্য কমানো, পৃথকীকরণ, পুনর্ব্যবহার ও জৈবসার উৎপাদনের মাধ্যমে সার্কুলার গ্রিন ইকোনমি বাস্তবায়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও জোট জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতের সবুজ ও ন্যায্য রূপান্তর নিশ্চিত করবে। এই খাতটিকে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ীকরণ, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁঁকি মোকাবিলার জন্য আমাদের দাবিসমূহ নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে। এখন প্রয়োজন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গুণগত বিনিয়োগ, যার সর্বোত্তম ক্ষেত্র হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। পাবলিক প্রকিউরমেন্টে স্বচ্ছতা জরুরি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!