মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ০১:১০ এএম

এনবিআর: এক চেয়ারম্যান হটাতে গিয়ে আতঙ্কে হাজারজন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ০১:১০ এএম

এনবিআর: এক চেয়ারম্যান হটাতে গিয়ে  আতঙ্কে হাজারজন

চেয়ারম্যান হটাতে গিয়ে নিজেরাই ধরাশায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরে আন্দোলনকারী ফ্রন্টলাইনাররা। আন্দোলন প্রত্যাহারের পর তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনারকে  বরখাস্ত করা হয়। তাদের নাম এখন সীমা লঙ্ঘনকারী। তবে, সীমা লঙ্ঘন কম করেছেন, এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষমা করার অভয় দিয়েছেন যাকে সরানোর টার্গেট সেই এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস হাউস পরিদর্শনে গিয়ে এ অভয়বাণী দিয়ে এসেছেন তিনি। এনবিআরে কমপ্লিট শাটডাউন আন্দোলন প্রত্যাহারের পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অবসর, বদলি, বরখাস্ত করা হয়েছে। বড় রকমের ধাক্কা সামলে ওঠা এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের ভাষায়, এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। আন্দোলন শুধু ওই ক’জনে করেনি, অনেকে করেছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি-তাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার নিয়ে শুরু থেকেই এক ধরনের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছিল। অনেকটা গোপনে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া তড়িঘড়ি সংস্কার করতে গিয়ে তৈরি হয়েছিল এই বিপত্তি। শুরু থেকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান কর্মকর্তাদের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে না বলে আশ্বস্ত করলেও খসড়া অধ্যাদেশে তার প্রতিফলন ঘটেনি। পরবর্তী সময়ে খসড়া অধ্যাদেশে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানে আশ্বস্ত করলেও অধ্যাদেশ জারি হয়েছে প্রায় খসড়া অধ্যাদেশের মতো। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান তার পূর্ববর্তী পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ জুলাই পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কর ফাঁকির বিষয়ে সহযোগিতা করতে এনবিআরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অডিট কার্যক্রম বন্ধ করেন। এ ছাড়া নজিরবিহীনভাবে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে অযৌক্তিক এবং অপরিকল্পিতভাবে ভ্যাট হার বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন। ফলে চেয়ারম্যান এবং তার ঘনিষ্ঠ কিছু কর্মকর্তার লুকোচুরির কারণে ক্যাডারদের নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলনে নামেছিল। একই সঙ্গে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন খোদ পরামর্শক কমিটির কোনো কোনো সদস্য। আন্দোলনরত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ প্রশাসনিক অনিয়ম, কর্মকর্তা হয়রানি ও সংস্কার প্রচেষ্টায় বাধার অভিযোগে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়েছে। প্রশাসনিক অনিয়ম, কর্মকর্তা হয়রানি ও সংস্কার প্রচেষ্টায় বাধার অভিযোগ তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ও কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
তারা আরও বলেছিলেন, আমার প্রশাসনিক ক্যাডার কোনো সচিবকে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে চাই না আমরা এনবিআর থেকেই চেয়ারম্যান নিয়োগ চাই কারণ, বাইরের ক্যাডারের কর্মকর্তারা আমাদের কষ্ট বুঝতে চান না। তাদের ইচ্ছামতো আমাদের চালাতে চান, সেটা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখার এখনই উপযুক্ত সময়। আমাদের প্রমোশন হওয়ার কথা ছিল সিরিয়াল মোতাবেক, চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন লোকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইচ্ছামতো যাকে-তাকে সামান্য অজুহাতে সিরিয়াল ভঙ্গ করে নিজের পছন্দমতো করে প্রমোশন ও বদলি হয়েছে। সময়মতো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি, ডিপিসি করা হচ্ছে না, পদোন্নতির পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না, নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আমরা যারা এই বৈষম্যের শিকার হয়েছি, তারাই প্রতিবাদ জানাই। একটি বিষয় শুরু থেকেই প্রতীয়মান যে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মতান্ত্রিক এই কর্মসূচির ব্যাপকতা ও যৌক্তিকতার বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঠিক তথ্য প্রদান না করে বরং প্রকৃত তথ্য আড়াল করেছেন।
গত জুনের শুরু থেকে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা দেশজুড়ে কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসে সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে সম্পূর্ণ কর্মবিরতি, পদযাত্রা, অনশন এবং মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।
এনবিআরের টেকসই সংস্কারে শুরু হওয়া দেশব্যাপী এই আন্দোলন দমাতে কিছু কিছু কর্মকর্তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠরা। ব্যর্থ হয়ে তারা এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছিল। এনবিআরের মতো সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংস্কার অবশ্যই এনবিআরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদ সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি টেকসই সংস্কার করা উচিত ছিল। তা না করে মধ্যরাতে একটি অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সরকারের রাজস্ব নীতি নির্ধারণ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হলো। যাদের কাস্টমস-ট্যাক্সের মতো একটি টেকনিক্যাল বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। কাউকে কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে  গত ১২ মে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠন করে সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জড়ানোর সুযোগ তৈরি করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। যার কারণেই মূলত আন্দোলন বেগবান হয়। ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে একধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সরকার এনবিআরের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হবে।
যার ফলে ৩০ জুন দেশের শীর্ষ কয়েকজন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতায় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় এনবিআর রিফর্ম ইউনিটি কাউন্সিল। এর আগে এনবিআর সংস্কার ঘিরে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। এরপর ঘটনার পরম্পরায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ভিন্নপথ অবলম্বন করে। মাঠে নামে দুদক। এনবিআরের সিনিয়র মোস্ট ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। এ অভিযোগগুলো গত দুই দশকের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে। তদন্তাধীন ছয় কর্মকর্তা হলেনÑ আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য একেএম বদিউল আলম, ঢাকা কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন খান, ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ এর উপ-কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসান তারেক রিকাবদার এবং কাস্টমস-আবগারি ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কু-ু। তাদের মধ্যে হাসান তারেক এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং অন্যরাও বিভিন্নভাবে আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এরপর আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক তদন্তে নামে দুদক। তারা হলেন, বড় করদাতা বিভাগের (ভ্যাট) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশিদ মিয়া, সদস্য মো. লুৎফুর আজিম, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (সিআইআইডি) সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আলমগীর হোসেন, ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ এর উপ-কর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাসান। এখানেই শেষ নয়। ৩ জুলাই প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষপর্যায়ের তিন এনবিআর সদস্য শুল্ক নীতি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের হোসেন আহমেদ ও মো. আলমগীর হোসেন এবং ভ্যাট নীতি বিভাগের মো. আব্দুর রউফ। এ ছাড়া বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার (সিসি) মো. সাব্বীর আহমেদ এবং কর পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিচালক এম মইনুল এরফানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার।
যথারীতি এর সরকারি ভাষা: জনস্বার্থে তাদের সকলকে বাধ্যতামূলক অবসর। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাণিজ্য কার্যক্রমে বিঘœ ঘটানো এবং রাজস্ব ঘাটতির কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য হচ্ছে, এনবিআরের একাধিক সদস্যসহ জনাবিশেষ প্রভাবশালী  কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের অধিকাংশই আন্দোলনের সম্পৃক্ত ছিলেন। অথবা নেপথ্য থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। তারা খুব আশাবাদী ছিলেন আবদুর রহমান খানকে সরাতে পারবেন বলে। সেই আশায় গুড়ে বালি। তারা পরাস্ত হয়েছেন। সমান্তরালে নানান ম্যাকানিজমে চেয়ারম্যান কেবল টিকেই যাননি এখন রীতিমতো উইন-ইউনে ফুরফুরে মুডেও আছেন। একাধিক সূত্র বলছে, এদিন দিন নয়। সামনের দিনগুলো তাকে কোনোদিনের কাছে নিয়ে যাবে, তা একটু অপেক্ষা করে দেখার বিষয়। কারণ ভেতরে-ভেতরে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মধ্যে আবারও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। 
‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে সংঘটিত আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে এনবিআরের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এবং অন্যদের দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক দিয়ে নজরদারির আওতায় আনায় ফুঁসছে সংশ্লিষ্ট অনেকে। এনবিআরের অভ্যন্তরে চলছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। লক্ষণ ভালো নয়। নানা কথা ঘুরছে এনবিআরের চার দেওয়ালের বাইরে। 
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। এখন শোনানো হচ্ছে নতুন করে। বলা হচ্ছে, কিছু অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও নিজেরা লাভবান হতে নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন। এক্ষেত্রে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানি করেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এনবিআর কর্মকর্তাদের হেনস্তা বা শাস্তির আসল কারণ তা নয়। কঠোরতার ধুম চর্চার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জানান দিয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাছেন। ফলে কর্মকর্তারা কাজে ফিরলেও কাজে মন দেওয়ার অবস্থা নেই। কখন কার চাকরি খোয়া যায় সেই আতঙ্কে প্রতিষ্ঠানটির টপ টু বটম। চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে চেয়ারম্যান অভয় দিলেও সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নিজেদের মধ্যে আস্থা-অনাস্থার সংকটও। এই বয়সে এসে কে কাকে দুদকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয় সেই গ্যারান্টি নেই। যা নিজের এবং পরিবারের জন্য খুবই অসম্মানজনক। এর বিপরীতে তথৈবচভাবে দুর্নীতি-অনিয়মে হাত পাকা ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন পাচ্ছেন। তাদের কতকজন গণক্ষমা চাইতে মন্ত্র দিচ্ছেন আন্দোলনে থাকা অনেককে। তাদের বলা হচ্ছে, চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে লুটিয়ে পড়তে।
তাদের মাধ্যমেই প্রচার পেয়েছে: ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানই নয়, আরও শতাধিক কর্মকর্তার তালিকাও প্রস্তুত। চেয়ারম্যান অভয় দিলেও ভয়ের তাড়া প্রায় সবারই। আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরা এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টার্গেট করে দুদকের অনুসন্ধান চালানোর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ এনবিআর সংস্কার নিয়ে কারো আপত্তি নেই। আপত্তি ছিল এনবিআরের নিজস্ব আমলাতন্ত্রের পদায়ন এবং সরকার গঠিত কমিটির প্রতিবেদন পাশ কাটিয়ে একটি সিদ্ধান্ত এনবিআর কর্মীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে। তাদের এই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে আন্দোলন। পাশাপাশি সরকারের চেয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি শক্তিশালী কিনা, এ প্রশ্নেরও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এতজন ‘জ্ঞানী বিসিএস ক্যাডার অফিসার ও সরকার’ থাকা সত্ত্বেও তারা এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে ব্যর্থ হলেন। সমস্যাটির সমাধান হয়েছে ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপে। সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারের সক্ষমতার চেয়ে ব্যবসায়ী বা বাইরের কারো এমন সক্ষমতা ভালো বার্তা দেয় না। এনবিআরের সমস্যা ব্যবসায়ীরা সমাধান করলে, সারা বছর ধরে কিছু কিছু ব্যবসায়ীর অনৈতিক আবদার মেটাতে হবে চেয়ারম্যানকে যার জন্য সরকার হারাবে রাজস্ব। এ ছাড়া আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের সময়কার কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর ইন্ধন থাকার বিষয়টির ফয়সালাও হয়নি। স্বয়ং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ করেছিলেন অভিযোগটি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!