সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এটিএম মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৭:২৮ এএম

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ, বাংলাদেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র

এটিএম মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৭:২৮ এএম

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ, বাংলাদেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র

বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার মানে হচ্ছে নতুন গাড়ি ক্রয়ের ব্যবস্থা- প্রশিক্ষণের নামে বেশকিছু কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা- দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা।

এই কারণে বৈদেশিক ঋণের অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় ৮-১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। নিজস্ব অর্থায়নে যে প্রকল্প ২০ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব বৈদেশিক ঋণের অর্থে সে প্রকল্প বাস্তবায়নে লেগে যাবে ২০০ কোটি টাকা। যাদের নিজস্ব রাজস্ব আয় আছে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নিজস্ব প্রকৌশলী আছে- তারা কেন নিজস্ব অর্থ ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিটে রেখে রাষ্ট্রকে বন্ধক রেখে নেওয়া বৈদেশিক ঋণের অর্থে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করবে? পরিকল্পনা বিভাগ কেন এরূপ প্রকল্প অনুমোদন করবে- পরিকল্পনা উপদেষ্টা কি বিষয়টা বুঝতে অক্ষম- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কেন এরূপ প্রকল্পের জন্যে বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের ব্যবস্থা করবে- অর্থ বিভাগ কেন এই বিষয়ে প্রশ্ম উঠাবে না- একনেক কেন এই বিষয়ে প্রশ্ন উঠাবে না- বাংলাদেশ ব্যাংক কেন রিজার্ভের অর্থ থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যাবে? এই রূপ অবস্থা চলতে থাকলে রাষ্ট্র ঋণভারে জর্জরিত হয়ে গভীর সমুদ্রের তলদেশে তলিয়ে যাবে- শত বছরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। 
এ রূপ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্যে রাষ্ট্রকে কিছু নীতি নির্ধারণ করতে হবে- যাদের নিজস্ব রাজস্ব আয় রয়েছে তাদেরকে তাদের নিজস্ব অর্থে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে- বৈদেশিক ঋণে তারা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবে না- কেউ যদি নীতি লংঘন করে বৈদেশিক ঋণের অর্থে প্রকল্প গ্রহণে আগ্রহী হয় তাহলে বৈদেশিক ঋণ তাদের নিজেদের  পরিশোধ করতে হবে- একনেকে প্রকল্প প্রস্তাব পাস হওয়ার পূর্বে বৈদেশিক ঋণের পুরো অর্থ তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। 

এরপর আসবে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গ- রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজন নেই- রাষ্ট্র কেন সেরূপ প্রকল্পের জন্যে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে যাবে? অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের মধ্যে সর্বাগ্রে আসবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ-দপ্তর-পরিদপ্তর-বিচারালয়ের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প (ঈধঢ়ধপরঃু ইঁরষফরহম ঢ়ৎড়লবপঃ)। দক্ষতা উন্নয়ন হচ্ছে নামের বাহারী ব্যবহার- প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে আড়াল করার প্রচেষ্টা- বিদেশি কোনো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যদি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সেটাকে দক্ষতা উন্নয়ন বলা যেতে পারে- তা না করে শুধু বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর মাঝে কোনো দক্ষতার উন্নয়ন হতে পারে না। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণের জন্যে কেন রাষ্ট্র সার্বভৌম গ্যারান্টির বিনিময়ে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে নিজেকে ঋণভারে জর্জরিত করবে? ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনো কর্মকর্তা কোনো বিচারক কি ব্যাংক থেকে  নিজস্ব জমি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যাবেন- না, সেটা কেউ করতে যাবেন না- তাহলে রাষ্ট্রকে বন্ধক রেখে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে কেন তারা বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণে যাবেন? উল্লেখ্য, এরূপ সফর আয়োজনের জন্য ২/১টা বেসরকারি কোম্পানির সৃষ্টি হয়েছে, তাদের পকেটে বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় ৫০% অর্থ চলে যায়, কি হরিবল অবস্থা।  অর্থ সচিব এবং অর্থ উপদেষ্টাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে এই রূপ প্রকল্প গ্রহণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। 

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে আসবে কোনো প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক ঋণের অর্থে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের জন্য বহু অপ্রয়োজনীয়  আবাসিক ভবনসহ একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না- এরূপ প্রকল্প গ্রহণের দ্বারা কারা উপকৃত হচ্ছেন- নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পিডি, ভিসি সমেত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী- এগুলো ব্যবহার না হওয়াতে সংরক্ষণ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে- বিনা ব্যবহারে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে-কালক্রমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। 

প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বিশাল অংকের বৈদেশিক ঋণের অধীনে গৃহীত ফিনল্যান্ড ভিত্তিক শিক্ষা সংস্কার প্রকল্প। ২০২৩ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য বলছে ২০২১ সালে প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ২০২০ সালের তুলনায় ১৪ লাখ কমে গিয়েছিল আর ২০২২ সালে সেটা কমে যায় ৮ লাখ ৩২ হাজার। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনেকটাই শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়লে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাবে কোথা থেকে- একইভাবে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাবে কোথা থেকে? মাধ্যমিকে এবার পাশ করেছে ১৩ লাখ শিক্ষার্থী- উচ্চ  মাধ্যমিকে সিট ক্যাপাসিটি রয়েছে ৩৩ লাখ-২০ লাখ সিট খালি থাকবে- কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে শিক্ষার্থীশূন্য- তাদের শিক্ষকম-লীর কোনো কাজ থাকবে না- কর্মছাড়া তারা বেতন-ভাতা নেবে- একাডেমিক ভবন, ছাত্র/ছাত্রী নিবাস অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হতে থাকবে- শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কারো কি এ বিষয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই?
বিদ্যালয় বিমুখ যুব শক্তি কোথায় যাচ্ছে- কেউ চাঁদাবাজি- কেউ কিশোর গ্যাং- কেউ রিকশা/সিএনজি/মোটরবাইক চালক/-কেউ মধ্যপ্রাচ্যে-কেউ ইউরোপ যাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে লিবিয়ায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আর কেউ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প কীভাবে একটা জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে এটা তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ- অথচ শিক্ষা ক্যারিকুলামের সামান্য সংযোজন বিয়োজনের জন্য বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে কোনো প্রকল্প গ্রহণের আবশ্যকতাই ছিল না। জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার এরূপ অপরাধ দ- বিধিতে বর্ণিত খুনের অপরাধের চাইতেও অধিকতর জঘন্য। এরূপ অপরাধ সংগঠনের জন্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঋণদানকারী সংস্থাকে দায়ী করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো অত্যাবশ্যক।

২ হাজার পূর্ববর্তী সময়ে বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণের দিক থেকে চ্যাম্পিয়ন ছিল প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে খএঊউ. ২ হাজার পরবর্তী সময়ে সেটা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সিটি করপোরেশন/ পৌরসভা পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো দেশটাকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পরূপী রাক্ষুসে দানব কর্তৃক গিলে খাবার মতো অবস্থা। অবস্থাটা এমন- আমি দেশটাকে লুটপাট করব-বিদেশে অর্থ পাচার করব- সেজন্য আমার বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন- যত পার দেশকে বন্ধক রেখে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ কর-দেশ গোল্লায় যাক তাতে আমার কিছু যায় আসে না- ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সরকার প্রধানের অবস্থা অনেকটাই এ রকম দাম্ভিকতায় ভরা ছিল।

উল্লেখ্য, খএঊউ এর তত্ত্বাবধানে বহু ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলো নির্মাণের কোনো আবশ্যকতা ছিল না- পৌরসভাগুলোতে বহু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না- সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। 

অথচ এরূপ একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কারো কোনো ভাবনা চিন্তা নেই- কোন রাজনীতিবিদ/বুদ্ধিজীবী/অর্থনীতি বিশারদ কারো কোনো উচ্চ বাচ্য নেই- কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো কর্মসূচি নেই- কোনো সংস্কার বিশারদের কোনো বক্তব্য নেই-অধ্যাপক আলী রিয়াজ কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবে নেই কোনো সুপারিশ।  আমরা সবাই হয়ে পড়েছি প্রচ- স্বার্থপর। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে- ব্যক্তি স্বার্থ/গোষ্ঠীর স্বার্থ/দলীয় স্বার্থ আর রাষ্ট্রের স্বার্থ একমুখী বিচরণ করে না। 

বৈদেশিক ঋণের যাঁতাকল থেকে রেহাই পাবার জন্য রাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা হচ্ছে-

১- বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।
২- যেসব সরকারি সংস্থার নিজস্ব রাজস্ব আয় রয়েছে সেসব সংস্থার জন্যে বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না- যদি বিশেষ প্রয়োজনে নিতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বৈদেশিক ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

৩- বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।৪-বৈদেশিক ঋণের অর্থে প্রস্তাবিত কোনো প্রকল্পে বিদেশ প্রশিক্ষণ নামীয় কোনো কম্পোনেন্ট থাকতে পারবে না- যত ধরনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তত ধরনের প্রশিক্ষণ দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চঅঞঈ দিতে বাধ্য থাকবে। 
৫- বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে গৃহীত কোনো প্রকল্পে নতুন গাড়ি ক্রয়ের কোন কম্পোনেন্ট থাকতে পারবে না- গাড়ির প্রয়োজন হলে পরিবহন পুল, খএঊউ সেটা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, খএঊউ এর মালিকানায় অব্যবহৃত হাজারো গাড়ি রয়েছে।   

এরূপ শর্ত মেনে ঋণ দিতে কোনো ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অনাগ্রহী হলে তার কাছ থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করা যাবে না। 

এটিএম মোস্তফা কামাল, অর্থনীতিবিদ- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

Shera Lather
Link copied!