বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০১:১২ এএম

ঢাকা শহর থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০১:১২ এএম

ঢাকা শহর থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক

রাজধানী ঢাকা যেন ক্রমেই পরিণত হচ্ছে এক অগ্নি-বোমার শহরে। নিমতলী, চুড়িহাট্টা কিংবা সর্বশেষ মিরপুরের শিয়ালবাড়ি প্রতিটি অগ্নিকা-ের পেছনেই রয়েছে একই চিত্র: দাহ্য রাসায়নিকের অবৈধ গুদাম, নিরাপত্তাহীন ভবন, আর প্রশাসনিক উদাসীনতা। ভয়াবহ এসব অগ্নিকা-ে শত শত প্রাণহানি ও অগণিত মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হওয়ার পরও আমাদের যেন শিক্ষা হয় না।

২০১০ সালের নিমতলীর অগ্নিকা-ে ১২৪ জন, ২০১৯ সালের চুড়িহাট্টায় ৭১ জন, আর সম্প্রতি মিরপুরে ১৬ জনের মৃত্যুর পরও প্রশ্ন থেকে যায়, কবে টনক নড়বে কর্তৃপক্ষের? একের পর এক প্রাণহানির পরও কি কারণে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার কেমিক্যাল গোডাউনগুলো আজও দাহ্য বস্তুর পাহাড় হয়ে রয়েছে? কেনই বা এই গোডাউনগুলোকে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না? 

সরকারি তথ্য বলছে, রাজধানীজুড়ে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। শুধু পুরান ঢাকাতেই রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি গোডাউন, যার মধ্যে ১৫ হাজারই আবাসিক ভবনের নিচতলায়। ফায়ার সার্ভিস ৪,৮০০টির বেশি গুদামকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অথচ মাত্র আড়াই হাজার গুদাম ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত, বাকিগুলো অবৈধভাবে চলছে বছরের পর বছর। ২০১৯ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ গুদাম উচ্ছেদের অভিযান শুরু করেছিল, কিন্তু ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের অনুরোধে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর অভিযান শুরু হয়নি। এ যেন ব্যবসায়ীদের কাছে রাষ্ট্রের আত্মসমর্পণ। মানুষের জীবনের চেয়ে মুনাফা যখন  বড় হয়ে যায় তখন নৈতিকতা বলে আর কিছু থাকে না।

অগ্নিকা-ের পর প্রতিবারই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, সুপারিশ দেওয়া হয়, সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু সময় গড়ালেই সব ফাইল ময়লা জমে পড়ে থাকে মন্ত্রণালয়ের তাকের ওপর। নিমতলীর পর ১৭ দফা সুপারিশ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। চুড়িহাট্টার পরও ফায়ার সার্ভিস যে সুপারিশ দিয়েছিল, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক গুদাম নিষিদ্ধ করা, ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা, পানির প্রবাহ নিশ্চিত করাÑএসব আজও বাস্তবতার মুখ দেখেনি। এমন এক প্রশাসনিক স্থবিরতা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, তা নিঃসন্দেহে অপরাধও।

প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার অগ্নিকা- ঘটে। শুধু ২০২৩ সালে ২৭,০০০-এর বেশি অগ্নিকা-ে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ, ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার সম্পদ। ২০২৪ সালে সেই সংখ্যাই আরও বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসেই আগুনে মারা গেছে ১৫৪ জন। যা আগের বছরের তুলনায়ও ভয়াবহ। অথচ এই পরিসংখ্যান আমাদের নাড়া দেয় না, এখানে মৃত্যু যেন নিছক দৈনন্দিন খবরের শিরোনামে পরিণত হয়েছে।

অথচ এ সমস্যা নতুন নয়, সমাধানও জটিল নয়। অবিলম্বে সরকারকে পুরান ঢাকা ও অন্যান্য আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে শিল্পাঞ্চলে স্থানান্তরের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক কঠোরতা ও আইনি পদক্ষেপ। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপদ বিকল্প স্থান তৈরি করতে হবে, কিন্তু তার আগেই রাজধানীর বাসাবাড়ি ও ঘিঞ্জি এলাকায় এসব গুদামকে বন্ধ করতে হবে যেকোনো মূল্যে।

এ ছাড়া আগুন নেভানোর অবকাঠামো ও সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের জন্য প্রতিটি গলিতে স্ট্রিট হাইড্রেন্ট স্থাপন, প্রশস্ত রাস্তা ও জরুরি সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পুরান ঢাকার বৈদ্যুতিক তারের জট, অপরিকল্পিত ভবন ও অবৈধ সংযোগ, সবকিছুতেই এখনই শৃঙ্খলা আনতে হবে।বারবার একই ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি আমাদের জাতি হিসেবে লজ্জিত করে। আমরা আর নতুন নিমতলী বা চুড়িহাট্টা দেখতে চাই না। তাই এখনই সময়, কথার ফুলঝুড়ির পরিবর্তে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করার। ঢাকা শহর থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর কার্যকর ও স্থায়ী উদ্যোগ এখন যেন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

প্রতিটি প্রাণের মূল্য আছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার দায় আছে। সেই দায় থেকে সরকার বা প্রশাসন কেউই মুক্ত নয়। তাই মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সরকারের নৈতিক, প্রশাসনিক ও মানবিক দায়িত্ব। আমরা আর কোনো নিমতলী, চুড়িহাট্টা বা মিরপুর দেখতে চাই নাÑ আমরা চাই নিরাপদ ঢাকা, জীবনের জন্য নিরাপদ একটি শহর।

এখনই সময় ঢাকা শহর থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার। না হলে আগুনের এই মৃত্যুপুরীতে আরও শত সহ¯্র স্বপ্ন ছাই হয়ে যেতে দেখা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!