বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০২:৪৩ এএম

স্বর্ণের দামে আগুন

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০২:৪৩ এএম

স্বর্ণের দামে আগুন

বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দর চড়ছেই। যেন পাগলা ঘোড়া মতো ছুটছে মূল্যবান এ ধাতুর দাম। রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে; গড়ছে ইতিহাস। ২৪ ঘণ্টা না যেতেই সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরির দাম আরও ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়েছে, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আর এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ভরি ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকায় উঠেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই দর এত উচ্চতায় উঠেনি। কোথায় গিয়ে থামবে, আদৌ থামবে কি না, সেটাই এখন এ খাতের ব্যবসায়ীদের বড় চিন্তার বিষয়। কেননা, আকাশ ছোঁয়া দামে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বেচাবিক্রিতে ধস নেমেছে; ব্যবসা ব্যাপকভাবে পড়ে গেছে। দোকানে ক্রেতা নেই বললেই চলে।

এদিকে দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই স্বর্ণের অলংকার কেনার বদলে বিক্রি করছেন। জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক গ্রাহক আগে কেনা গহনা এখন বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও মূল্যবান এই ধাতুর দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগস্টের মাঝমাঝি সময় থেকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে। তার সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারেও বাড়ানো হচ্ছে।

বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে অস্থির ছিল দেশের বাজার। পুরো মাসে মোট ১২ বার দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। এর মধ্যে ১০ বারই বেড়েছে দাম, কমেছে মাত্র দুইবার।  সেপ্টেম্বর মাসে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরির দাম বেড়েছে ২১ হাজার ৬৬ টাকা। সেই উল্লম্ফন অক্টোবর মাসেও চলছে। এ মাসের ১৪ দিনে ছয় দফায় ২২ ক্যারেট মানের দাম ভরিতে ২০ হাজার ৯৪৭ টাকা বেড়েছে। চলতি বছর (২০২৫ সাল) এখন পর্যন্ত মোট ৬৬ বার দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। এর মধ্যে ৪৮ বারই বেড়েছে, আর কমেছে মাত্র ১৮ বার। গত বছর (২০২৪ সাল) পুরো সময়ে দাম সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার।

গত ২০ আগস্ট থেকে বিশ্ববাজারে দাম টানা বাড়ছে। সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজুসও দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে চলেছে। মাঝে দুই দিন নি¤œমুখী হওয়ায় দেশের বাজারেও কিছুটা কমানো হয়।

বাজুস সাধারণত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে বিক্রি হয়। তবে মাঝেমধ্যে দিনে দুবারও দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি। গতকাল রাত ৯টার দিকে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১৮ হাজার ৫৪৭ টাকায় বিক্রি হবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি বিক্রি হবে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকায় বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি কিনতে লাগবে ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা। ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকায় বিক্রি হবে।

দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় স্বর্ণের ভরি ছিল ১৭০ টাকা। তার পরের পাঁচ দশকে দাম বেড়ে ১ হাজার ২৭২ গুণ হয়েছে। এখন সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরির দাম ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। এর মধ্যে গত আড়াই দশকে দাম বেশি বেড়েছে। জুয়েলার্স সমিতির তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সালে ২২ ক্যারেটের ভরি ছিল ৬ হাজার ৯০০ টাকা। পরের পাঁচ বছরে সেটি দ্বিগুণ হয়। ২০১০ সালে দাম তিন গুণ বেড়ে হয় ৪২ হাজার ১৬৫ টাকা। ২০১৫ সাল পর্যন্ত দাম খুব একটা না বাড়লেও তার পরের পাঁচ বছরে ভরিপ্রতি দাম প্রায় ২৭ হাজার টাকা বেড়ে যায়। ২০২২ সালে দাম ছিল সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার টাকা। পরের বছর ২১ জুলাই দাম প্রথমবারের মতো ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার দাম দেড় লাখ টাকা ছাড়ায়। দুই লাখ টাকা ছাড়ায় এক সপ্তাহ আগে ৬ অক্টোবর।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পাশাপাশি দামও পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকায় জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। স্বর্ণের অলংকার এখন সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মুদ্রার উল্টো পিঠ হচ্ছে, দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো স্বর্ণ কিংবা অলংকারের সম্পদমূল্য বেড়েছে। ফলে যাদের সিন্দুকে গচ্ছিত পুরোনো অলংকার রয়েছে, তারা দাম কতটুকু বাড়ল সেই হিসাব কষছেন।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে দেশে সব ধরনের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় জুয়েলারি ব্যবসায়, সেই প্রভাব কিছুটা বেশি। গত দুই মাসে স্বর্ণের অলংকারের বেচাবিক্রি গড়ে ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

বাজারের অস্থিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাজুসের সহসভাপতি এবং বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। অন্যদিকে স্বর্ণের দামও বেশি। সব মিলিয়ে গত দুই মাসে সারা দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ৬০-৭০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় আমরা বড় বিপদের মধ্যে আছি। ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

গতকাল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এদিন মার্কিন স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম আরও দেড় শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ২০৩ দশমিক ৭৯ ডলার দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ফিউচার মার্কেটে এই দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২০ দশমিক ২০ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্কারোপ করার পর দাম হু হু করে বাড়ছিল। ২২ এপ্রিল প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়ায়। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দর ৩ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে লেনদেন হচ্ছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়তে থাকে মূল্যবান এ ধাতুর দর।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!