মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০২:২৭ এএম

গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার উপায়

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০২:২৭ এএম

গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার উপায়

মানুষের অস্তিত্ব এক চিরন্তন দ্বন্দ্বে মোড়াÑ একদিকে সত্য, ন্যায় আর তাকওয়ার আলোকিত পথ; অন্যদিকে পাপ, লোভ আর কামনার ঘোর অন্ধকার। এই আলো-আঁধারের খেলায় যারাই আলোর দিকে এগিয়ে যায়, তাদের স্পর্শে সভ্যতা হয় সমৃদ্ধ, মানবতা পায় পূর্ণতা। আর যারা পাপের চোরাবালিতে ডুবে যায়, তাদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয় আর অবক্ষয়। তাই মানবজাতির প্রকৃত মুক্তি ও সাফল্যের চাবিকাঠি নিহিত একমাত্র গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করে স্রষ্টার আনুগত্যের ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই কঠিন পথ কীভাবে সহজ কৌশলে পাড়ি দেওয়া যায়? কোরআন, হাদিস, ইসলামি মনীষীদের অমূল্য দিকনির্দেশনা এবং আধুনিক মনোবিজ্ঞান এই পথকে অত্যন্ত সরল করে দিয়েছে। আসুন জেনে নিই সেই ছয়টি অব্যর্থ কৌশল।

১. অনুতাপের প্রথম সোপান:

গুনাহমুক্ত জীবনের পথে প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হলো তাওবা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আদম সন্তানেরা সবাই ভুল করে থাকে, কিন্তু তাদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো তারা, যারা ভুল করার পর তাওবা করে। (তিরমিজি, ২৪৯৯) তাওবা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির প্রতি এক মহামূল্যবান অনুগ্রহ। এটি শুধু আত্মাকে পাপের কালিমা থেকে মুক্ত করে না, বরং অনুশোচনা প্রকাশের পর হৃদয়ে এক নতুন উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে। মনোবিজ্ঞানও সমর্থন করে যে, ভুল স্বীকার করে পরিবর্তনের সংকল্প নেওয়া মানসিক চাপ ও অপরাধবোধ দূর করে, যা আত্মাকে হালকা করে তোলে।

২. শয়তানের হামলা থেকে রক্ষার ঢাল:

মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই সালাত (নামাজ) অশ্লীলতা ও গর্হিত কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে। (সুরা আনকাবুত, ৪৫)। দৈনিক পাঁচবার নামাজের জন্য দাঁড়ানো মানেই জীবনে আল্লাহর উপস্থিতিকে বারবার স্মরণ করা। প্রতিবার সিজদায় অবনত হওয়া শেখায় বিনয়, আর প্রতিটি তাকবির ঘোষণা করে পাপ থেকে দূরে থাকার শপথ। নামাজ এমন একটি শক্তিশালী ঢাল, যা শয়তানের প্ররোচনা থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখে।

৩. পরিবেশের প্রভাব:

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাথীদের সতর্ক করে বলেছিলেন, মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি (ধর্মীয় চরিত্র) অনুসরণ করে। সুতরাং প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য রাখে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। (আবু দাউদ, ৪৮৩৩)। সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা বলছে, মানুষের অভ্যাস ও আচরণ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দ্বারা। তাই গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে চাইলে নেককার ও ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা অপরিহার্য। একটি পবিত্র পরিবেশই আত্মার পরিশুদ্ধির পথকে সহজ করে দেয়।

৪. আত্মার খাদ্য ও প্রশান্তি:

মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই এই কোরআন এমন এক পথের দিকনির্দেশনা দেয়, যা সর্বাধিক সঠিক। (সুরা ইসরা, ৯)। কোরআন হলো জ্ঞান ও আলোর উৎস। এর প্রতিটি শব্দ ও আয়াত অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং চরিত্রকে মহৎ করে তোলে। মনীষীরা বলেন, যে হৃদয় কোরআন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তা মরুভূমির মতো শুষ্ক। পক্ষান্তরে, যে হৃদয়ে কোরআনের সুর বাজে, তা বসন্তের উদ্যানের মতো সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নিয়মিত কোরআন পাঠ যে মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়, তা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত।

৫. আল্লাহর নৈকট্য লাভের সিঁড়ি:

রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, আমার বান্দা নফল (ঐচ্ছিক) আমল দ্বারা ক্রমাগত আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, অবশেষে আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি। (বুখারি, ৬৫০২)। নফল নামাজ, রোজা, দান-সাদকা কিংবা গভীর রাতের তাহাজ্জুদÑ এই ছোট ছোট আমল বান্দাকে আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র করে তোলে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিঃস্বার্থ সৎকাজের মাধ্যমে মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানুষের মধ্যে সুখ, প্রশান্তি ও ইতিবাচকতা সৃষ্টি করে।

৬. নিজেকে যাচাই করা :

ইসলামি ব্যক্তিত্ব হাসান আল-বসরি (রহ.) এক মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন, মৃত্যুর আগে নিজের হিসাব নিজেই নাও। কারণ কিয়ামতের দিন তোমাদের হিসাব নেওয়া হবে। প্রতিদিনের শেষে নিজের ভুলত্রুটি, ভালো-মন্দের কাজের হিসাব নেওয়া একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ অভ্যাস। মনোবিজ্ঞানে একে ‘ঝবষভ-ৎবভষবপঃরড়হ’ বলা হয়। নিয়মিত আত্মসমালোচনা মানুষকে দ্রুত সংশোধন হতে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও উন্নত পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।

গুনাহমুক্ত জীবন কোনো অলিক কল্পনা নয়; এটি সচেতন প্রচেষ্টা ও আল্লাহর দয়ার মাধ্যমে অর্জিত এক বাস্তবতা। তওবা, নামাজ, কোরআন, সৎসঙ্গ, নফল আমল ও আত্মপর্যালোচনাÑ এই কৌশলগুলো যারা জীবনের পাথেয় করে নেয়, তারা পাপের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে তাকওয়ার নির্মল আলোয় আলোকিত হয়। বস্তুত, গুনাহমুক্ত জীবনের সহজতম পথ হলো আল্লাহর স্মরণ, তাঁর পূর্ণ আনুগত্য ও আত্মসংযমের নিয়মিত অনুশীলন। আর এই পথই এনে দিতে পারে মানবতার মুক্তি, সমাজে শান্তি এবং পরকালের অনন্ত সাফল্য।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!