মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নুসরাত জাহান (স্মরনীকা)

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৫, ০৩:১৭ এএম

সুদান: একটি মানবিক বিপর্যয়ের কাহিনি

নুসরাত জাহান (স্মরনীকা)

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৫, ০৩:১৭ এএম

সুদান: একটি মানবিক বিপর্যয়ের কাহিনি

যখন পৃথিবীর এক প্রান্তে মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে, তখন অন্য এক প্রান্তে কেউ হয়তো নিজের মাটিতে সন্তানকে কবর দিচ্ছে। সুদান আজ সেই অন্ধকার প্রান্তের প্রতিচ্ছবি। যে দেশে একসময় নীলনদের স্রোত বয়ে যেত শান্তির প্রতীক হয়ে, সেই নদী আজ লাল হয়ে গেছে রক্তে। বাতাসে বারুদের গন্ধ, শিশুর কণ্ঠে কান্না, আর মানুষের চোখে হতাশা।

আফ্রিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সুদান দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে। কিন্তু ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এই দেশটি যখন নিজেদের সেনাবাহিনী ঝঁফধহবংব অৎসবফ ঋড়ৎপবং (ঝঅঋ) এবং আধাসামরিক বাহিনী জধঢ়রফ ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ঋড়ৎপবং (জঝঋ) এর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তখন পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে যায়।

দুই বাহিনীর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল সামরিক বাহিনীর একীকরণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রশ্নে। এই সংঘাত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী খার্তুম থেকে শুরু করে দারফুর, কাসালা, কোর্ডোফান পর্যন্ত।

এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত, প্রায় ১৩ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত, এবং ৩০ মিলিয়ন মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, হাসপাতাল ধ্বংস, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট সুদান এখন এক মৃতপ্রায় রাষ্ট্র।

২০২৫ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত আল জাজিরা ও রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, দারফুরের এল ফাশের শহরে জঝঋ বাহিনীর হামলায় কয়েক দিনের মধ্যেই শত শত মানুষ নিহত হয়।

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে পুরো শহর আগুনে পুড়ছে, বাড়িঘর ধ্বংস, বাজার-স্কুল মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বেঁচে থাকা মানুষগুলো খাবার বা পানি না পেয়ে মরুভূমি পাড়ি দিচ্ছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, এটি শুধু একটি গৃহযুদ্ধ নয় এটি একটি গণহত্যার রূপ নিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষদের লক্ষ্য করে হত্যা করা হচ্ছে।

হাজার হাজার শিশু আজ পিতা-মাতা হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে কাঁদছে। কিছু মা সন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে সীমান্তে যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে তাদের জন্যও আর কোনো আশ্রয় নেই।

সুদানের এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো ক্ষমতা দখলের লোভ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা।

জঝঋ মূলত গঠিত হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের শাসনামলে দারফুরে বিদ্রোহ দমন করার জন্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা একটি শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনীতে পরিণত হয়, যারা পরে সরকারি সেনাবাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। যুদ্ধের গভীরে আছে জাতিগত বিভাজন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং বিদেশি স্বার্থ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতাও এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। যখন বৈশ্বিক মিডিয়া ইউক্রেন বা ইসরায়েল গাজা যুদ্ধের খবর নিয়ে সরব, তখন সুদানের মৃত্যুপুরীর কথা যেন কেউ শুনতে চায় না। এই অবহেলাই আজ মানবতার পরাজয়।

সুদানের এই রক্তক্ষয় থামাতে হলে শুধু অস্ত্রবিরতি নয় প্রয়োজন একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ও মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা। জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও আরব লীগকে একসঙ্গে বসে একটি নিরপেক্ষ শান্তিচুক্তি তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নাগরিক সমাজ, নারী সংগঠন, সাংবাদিক, ও তরুণদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হলো মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া সেই অঞ্চলগুলোতে, যেখানে এখনো খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছায় না। কারণ, বন্দুক থেমে গেলেও ক্ষুধা, রোগ আর ভয় যদি থেকে যায়, তবে যুদ্ধ শেষ হয় না।

সুদান এখন পৃথিবীর বিবেকের পরীক্ষা। যে শিশু আজ খালি পেটে ঘুমায়, যে মা মৃত সন্তানের চোখে চেয়ে থাকে, তারা কারো দেশ নয় তারা আমাদের পৃথিবীর নাগরিক। এই যুদ্ধে জয়ী কেউ নয়, পরাজিত শুধু মানুষ। সুদানের ঘটনায় বৈশ্বিক সাহায্য করা উচিত। যাতে করে নতুন কোনো নিষ্পাপ প্রাণের বলি না হয়। সুদানে ঘটে চলা অমানবীয় ঘটনা যেন পৃথিবীর বুকে এক লাঞ্ছনার প্রতীক। পৃথিবীতে সভ্য জাতির বসবাস টিকিয়ে রাখতে হলে এসব বর্বরতাকে চিরতরে নিরসন করতে হবে।

নুসরাত জাহান (স্মরনীকা)
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!