অনেক মানুষের স্বপ্ন থাকে আমেরিকা যাওয়ার। অনেকে সফল হয় অনেকে হতাশ হয়ে দেশে কোনো কিছুতে মনোযোগী হয়। যারা শেষ পর্যন্ত আমেরিকা সফর সম্পূর্ণ করতে পারে তাদের কাছ থেকে জানব আমেরিকা যাওয়ার আদ্যোপান্ত। যারা আমেরিকা যাচ্ছেন তাদের জানতে হবে যাওয়ার নিয়মকানুন, ভিসা, যাওয়ার পর কি করবে সে সম্পর্কে ধারণা।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা চালু আছে, যার মধ্যে প্রধানত ভিজিটর ভিসা (ই১/ই২), স্টুডেন্ট ভিসা (এফ১), এবং কর্মসংস্থান-ভিত্তিক ভিসা (যেমন ইবি-৩) উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে অন্যান্য ভিসা যেমন, এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ভিসা (জে১) বা ইন্ট্রা-কোম্পানি ট্রান্সফারি ভিসা (এল১) চালু আছে। এফ-২ (এফ-২ ) ভিসায় স্বামী/স্ত্রী ও ২১ বছরের কম বয়সি অবিবাহিত সন্তানরা আমেরিকায় যেতে পারে। এর জন্য প্রধানত এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসাধারীর সঙ্গে এদের সম্পর্ক প্রমাণ করতে হবে, স্কুল থেকে এফ-২ ভিসার জন্য ফর্ম ও-২০ নিতে হবে, সেভিস ফি দিতে হবে, এবং আমেরিকান দূতাবাসে এফ-২ ভিসার আবেদন করতে হবে। এফ-২ ভিসাধারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে পারে না, তবে খ-কালীন বা পূর্ণকালীন (নাবালক হলে) পড়াশোনা করতে পারে। নিজের স্ত্রী সন্তান আমেরিকাতে নিয়ে যাওয়ার ভিসা হলো এফ-২। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে আমেরিকাতে এফ-২ ভিসায় গমনকারী রেজাউল হাসান জানাচ্ছেন বিস্তারিত-
প্রয়োজনীয় ধাপ ও যোগ্যতা
এফ-২ ভিসা কী?
এফ-২ ভিসা হলো এফ-১ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীলদের জন্য একটি অ-অভিবাসী ভিসা। এটি পরিবারের সদস্যদের এফ-১ শিক্ষার্থীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দেয়।
কে যোগ্য?
এফ-২ ভিসা একজন এফ-১ শিক্ষার্থীর স্বামী/স্ত্রী এবং অবিবাহিত সন্তানদের (২১ বছরের কম বয়সি) জন্য।
কীভাবে আবেদন করবেন
আপনি এফ-১ আবেদনের সময় একই সময়ে অথবা আলাদাভাবে এফ-২ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
মূল প্রয়োজনীয়তা
আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট, ছবি, এফ-২ নির্ভরশীলের সেভিস ফর্ম ও-২০, ভিসা আবেদন ফি এবং আবেদনপত্রের প্রয়োজন হবে। আপনাকে বিবাহের প্রশংসাপত্র (স্বামীর জন্য) বা জন্ম প্রশংসাপত্র (সন্তানদের জন্য) এর মতো সহায়ক নথিপত্রও সরবরাহ করতে হতে পারে।
গুরত্বপূর্ণ নোট
এফ-২ ভিসাধারীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি নেই
তবে, তারা পূর্ণকালীন প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীলরা অ-বৃত্তিমূলক বা বিনোদনমূলক কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এফ-২ ভিসার মেয়াদ সাধারণত এফ-১ ভিসার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি এফ-১ ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়, তাহলে এফ-২ ভিসার মেয়াদও বাড়ানো যেতে পারে।
সুযোগ-সুবিধা
এফ-২ ভিসায় আমেরিকা গেলে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তবে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। মূল সুবিধা হলো, আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন, যেখানে আপনার স্বামী বা স্ত্রী (যিনি এফ-১ ভিসায় পড়াশোনা করছেন) বসবাস করছেন। এ ছাড়াও, আপনি নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতে পারেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন। তবে, এফ-২ ভিসার প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো, আপনি কোনো বেতনভুক্ত কাজ করতে পারবেন না এবং পূর্ণকালীন একাডেমিক ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করার অনুমতি নেই।
এফ-২ ভিসায় আমেরিকা যাওয়ার পর আপনি যে সুযোগ-সুবিধাগুলো পেতে পারেন
পরিবারের সঙ্গে বসবাস
এফ-২ ভিসার প্রধান সুবিধা হলো, আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবেন, যিনি এফ-১ ভিসায় পড়াশোনা করছেন।
খণ্ডকালীন পড়াশোনা
আপনি কোনো একাডেমিক ডিগ্রি কোর্সের জন্য পূর্ণকালীন পড়াশোনা করতে না পারলেও, কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে খ-কালীন কোর্স করতে পারেন। যেমন, ভাষা শিক্ষার কোর্স বা অপেশাদার কিছু কোর্স।
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ
এফ-২ ভিসাধারীরা যুক্তরাষ্ট্রে অবাধে ভ্রমণ করতে পারেন, তবে মূল এফ-১ ভিসাধারীর বৈধ স্ট্যাটাস (যেমন, আই-২০ ফর্ম) অবশ্যই বৈধ থাকতে হবে।
গাড়ি চালানোর সুযোগ
এফ-২ ভিসাধারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারেন এবং গাড়ি চালানোর অনুমতি পেতে পারেন।
চিকিৎসা সুবিধা
যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যমান, এবং এফ-২ ভিসাধারীরাও এই সুবিধা ভোগ করতে পারেন, তবে চিকিৎসার খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে।
এফ-২ ভিসায় আমেরিকা গেলে
কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলোÑ কাজ করার অনুমতি নেই
এফ-২ ভিসাধারীরা কোনো বেতনভুক্ত কাজ করতে পারেন না। এখানে কাজ করার জন্য টঝঈওঝ (টহরঃবফ ঝঃধঃবং ঈরঃরুবহংযরঢ় ধহফ ওসসরমৎধঃরড়হ ঝবৎারপবং) এর অনুমতি প্রয়োজন হয়, যা এফ-২ ভিসার ক্ষেত্রে সাধারণত পাওয়া যায় না।
পূর্ণকালীন পড়াশোনার সীমাবদ্ধতা
এফ-২ ভিসাধারীরা কোনো একাডেমিক ডিগ্রি প্রোগ্রামের জন্য পূর্ণকালীন পড়াশোনার অনুমতি পান না। তবে, কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে খ-কালীন কোর্স করার সুযোগ থাকে।
ভিসার মেয়াদ
এফ-২ ভিসার মেয়াদ সাধারণত এফ-১ ভিসার মেয়াদ পর্যন্তই থাকে। এফ-১ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, এফ-২ ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।
আইনগত বাধ্যবাধকতা
এফ-২ ভিসাধারীকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন ও বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়।
আর্থিক নির্ভরশীলতা
এফ-২ ভিসাধারীরা সাধারণত তাদের এফ-১ ভিসাপ্রাপ্ত স্বামী বা স্ত্রীর ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হন।
রেজাউল হাসান বলেন আমি আমেরিকাতে আসছি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আছি মিসউরি স্টেটে, আমি এখানে আছি এফ-২ ভিসা বা ডিপেন্ডেন্ট ভিসাতে, আমেরিকা এফ-২ ভিসা খুব বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকে না তবে ক্যাশ জব করতে পারে। এফ-২ ভিসা থেকে স্টুডেন্ট ভিসাতে কনভার্ট হলে কাজ করা যাবে। সরকারি সব সুবিধা পাওয়া যাবে তবে শুধু চাকরি বা কাজ করা যাবে না। এটা সাধারণত যারা এখানে চাকরি বা ব্যবসা করে তাদের উপর নির্ভরশীল যে কোনো পরিবারের সদস্য আসতে পারে। সাধারণত পরিবারের সদস্য যারা দেশে থাকেন তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য এই এফ-২ ভিসা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন