দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া, যেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নির্মাণ খাত (ঈড়হংঃৎঁপঃরড়হ) একটি প্রধান কর্মসংস্থান ক্ষেত্র। দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণের চাহিদা পূরণে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের কদর সবসময়ই রয়েছে। তবে, অতীতের বিতর্ক ও জটিলতা এড়াতে মালয়েশিয়া সরকার বর্তমানে কর্মী নিয়োগে এনেছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, যা কর্মীদের জন্য নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করেছে।
নির্মাণ খাতে অনেক সুযোগ
মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাত শ্রমিকদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বড় বড় স্থাপনা, হাইওয়ে, সেতু এবং আধুনিক শিল্পাঞ্চল নির্মাণের কাজ সারা বছরই চলমান থাকে। রাজমিস্ত্রি, শাটরিং কার্পেন্টার, ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান এবং প্লাম্বারÑএই ধরনের দক্ষ কর্মীদের চাহিদা এখানে সবচেয়ে বেশি। কর্মীরা তাদের দক্ষতার ভিত্তিতে ভালো বেতন ও ওভারটাইমের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের সুযোগ পান।
নিয়োগের নতুন কাঠামো: জিটুজি ও সিলেক্টিভ রিক্রুটমেন্ট
বর্তমানে মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (ইগঊঞ) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত:
সরকারি ব্যবস্থাপনায় (বোয়েসেল):
যারা আগে কলিং ভিসার কোটায় মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত কর্মীদের জন্য বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (ইঙঊঝখ)-এর মাধ্যমে বিশেষ নিয়োগ চলছে। এটি সম্পূর্ণ দালালমুক্ত এবং অত্যন্ত কম খরচের একটি প্রক্রিয়া।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় (নতুন নিয়ম):
মালয়েশিয়া সরকার এখন বিদেশী শ্রমিক নিয়োগে ‘সিলেক্টিভ রিক্রুটমেন্ট’ মডেল অনুসরণ করছে। এই নিয়মে, নির্মাণ খাতে কর্মী নিয়োগ কেবল সরকারি প্রকল্পগুলোর জন্যই অনুমোদিত। সাধারণ বেসরকারি নির্মাণ কাজের জন্য কর্মী নেওয়ার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। নিয়োগের আবেদন এখন সরাসরি নিয়োগকর্তা বা যে কোনো এজেন্ট করতে পারে না, বরং সংশ্লিষ্ট খাতের অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমেই আবেদন জমা দিতে হয়।
যে নিয়মে যাবেন
মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে বৈধভাবে কাজ করতে যেতে আগ্রহী প্রতিটি কর্মীকে কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হবে:
দক্ষতা উন্নয়ন: নির্মাণ কাজের সংশ্লিষ্ট ট্রেডে (যেমন: ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, রাজমিস্ত্রি) সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ঞঞঈ) থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও সনদ নেওয়া অপরিহার্য। এটি আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।
ইগঊঞ ডেটাব্যাংকে নিবন্ধন: আপনার দক্ষতা ও পেশা অনুযায়ী অবশ্যই ইগঊঞ-এর কেন্দ্রীয় ডেটাব্যাংকে নিজেকে নিবন্ধিত করতে হবে। এটি বৈধ অভিবাসনের জন্য প্রথম ও বাধ্যতামূলক শর্ত।
বৈধ এজেন্সি নির্বাচন: শুধু সরকার অনুমোদিত বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে অথবা সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলের মাধ্যমেই আবেদন করা উচিত।
নিয়োগপত্র যাচাই: আপনার জন্য আসা নিয়োগপত্র বা চুক্তিপত্রটি খুব সতর্কতার সঙ্গে পড়ুন এবং বুঝে নিন। মাসিক বেতন, কর্মঘণ্টা, ওভারটাইম সুবিধা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
বহির্গমন ছাড়পত্র: স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের পর ইগঊঞ থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিই বৈধভাবে দেশ ছাড়ার চূড়ান্ত অনুমতি।
প্রতারণা এড়াতে জরুরি সতর্কতা
মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য যেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই প্রতারণা চক্র থেকে সতর্ক থাকতে হবে:
- নগদ লেনদেন বর্জন: সরকারি ফি বাদে অন্য কোনো প্রকার অগ্রিম টাকা বা নগদ অর্থ কোনো দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে দেবেন না। সব ধরনের আর্থিক লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করে রসিদ সংরক্ষণ করুন।
- মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস নয়: যদি কেউ খুব কম সময়ে বা অবিশ্বাস্য কম খরচে আপনাকে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে তা বিশ্বাস করবেন না। মনে রাখবেন, সরকারি প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও তা সবচেয়ে নিরাপদ।
- যোগাযোগের ঠিকানা: যে কোনো সমস্যা বা তথ্যের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ‘প্রবাস বন্ধু’ কল সেন্টার (১৬১৩৫)-এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন