ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

হংকংয়ে গৃহকর্মীদের নতুন দিগন্ত

প্রবাস প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০১:২৯ এএম

ডমেস্টিক হেল্পার (এফডিএইচ) হিসেবে নিরাপদ কর্মসংস্থান বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে হংকংয়ের ডমেস্টিক হেল্পার সেক্টর। দীর্ঘদিন ধরে দেশটির পরিবারগুলো বিদেশি গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল, আর সেই বাজারে এখন বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সরকারি সংস্থা বোয়েসেল (ইঙঊঝখ)-এর মাধ্যমে নিরাপদ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হংকং যাওয়ার সুযোগ থাকায় কর্মীরা পাচ্ছেন নিশ্চিন্ত কর্মসংস্থান ও উপার্জনের সম্ভাবনা। কর্মসংস্থানের এ সুযোগ শুধু অর্থনৈতিক নয়; বরং এটি বাংলাদেশের নারীদের জন্য আত্মনির্ভরশীলতার নতুন এক পথও খুলে দিচ্ছে।

ঋউঐ ভিসা : দুই বছরের নিশ্চিত চুক্তি

হংকংয়ে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে হলে ঋড়ৎবরমহ উড়সবংঃরপ ঐবষঢ়বৎ (ঋউঐ) ভিসা অপরিহার্য। এই ভিসা দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক, যা কর্মী ও কাজদাতার মধ্যে নির্দিষ্ট শর্তাবলির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। চুক্তির অন্যতম শর্ত হলো কর্মীকে ‘খরাব-রহ’ ব্যবস্থায় কাজদাতার বাসাতেই থাকতে হবে। নিরাপদ আবাসন ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাই এ ব্যবস্থার লক্ষ্য।

ন্যূনতম বেতন ও আর্থিক সুবিধা

ঋউঐ ভিসার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া গৃহকর্মীদের জন্য হংকং সরকার প্রতি মাসে ন্যূনতম ঐক$ ৫,১০০ বেতন নির্ধারণ করেছে (২০২৫ অনুযায়ী)। কাজদাতা খাবার সরবরাহ না করলে অতিরিক্ত ঐক$ ১,২৩৬ খাবার ভাতা প্রদান করতে হয়। ফলে গৃহকর্মীরা নিশ্চিন্তে মাসিক আয় করতে পারেন এবং পরিবারে নিয়মিত সাহায্য পাঠাতে সক্ষম হন।

কাজের পরিধি ও দৈনন্দিন দায়িত্ব

হংকংয়ে ডমেস্টিক হেল্পারদের কাজ বহুমুখী। রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া ও ইস্ত্রি করা, শিশু বা বৃদ্ধদের দেখভালসহ নানান দৈনন্দিন কাজ তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। কখনো কখনো পোষাপ্রাণীর যতœও নিতে হয়, অবশ্য তা পূর্ব চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে। কর্মীরা সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে এসব কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, যা তাদের চাকরি বজায় রাখতে সহায়তা করে।

আবাসন, চিকিৎসা ও শ্রমসুবিধা

গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর কর্মীকে কাজদাতার বাসায় আলাদা ঘুমানোর জায়গা দিতে হয়। পাশাপাশি থাকে চিকিৎসা সুবিধা, ঊসঢ়ষড়ুববং ঈড়সঢ়বহংধঃরড়হ ওহংঁৎধহপব, সপ্তাহে একদিন রেস্ট ডে, সরকারি ছুটি ও বার্ষিক ছুটি। এসব সুবিধা নিশ্চিত করাই হংকং শ্রম আইনের বাধ্যবাধকতা। ফলে বিদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া : সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক ধাপ

নিয়োগের আগে কর্মী ও কাজদাতার মধ্যে স্টান্ডার্ট ইম্পলোমেন্ট কন্টাক্ট (আইডি-৪০৭) সই করা হয়। তারপর কাজদাতা এসব নথি হংকং ইমিগ্রেশনে জমা দেন। ভিসা অনুমোদনের পর কর্মী হংকং-এ প্রবেশ করে সরাসরি কাজে যোগ দেন। বোয়েসেলের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিশ্চয়তা দুই-ই বজায় থাকে।

কাজদাতার দায়িত্ব ও আইনি বাধ্যবাধকতা

হংকংয়ে গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কাজদাতা নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব পালনে বাধ্য। নিয়মিত বেতন প্রদান, নিরাপদ আবাসন, খাবার বা খাবার ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা এবং চুক্তির শুরু-শেষে বিমান টিকিট দেওয়া এ দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। শ্রম আইন ভঙ্গ করলে কাজদাতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কর্মীর যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় নথি

ঋউঐ ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে বৈধ পাসপোর্ট, মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট, অপরাধমুক্ত সনদ এবং বয়স সাধারণত ২৩ বছর বা তার বেশি হতে হয়। পূর্বের গৃহস্থালি কাজ বা কেয়ারগিভিং-এর অভিজ্ঞতা থাকলে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়ে। ইঙঊঝখ-এর প্রশিক্ষণ কর্মীদের দক্ষতা ও প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করে।

নিষিদ্ধ কাজ ও সীমাবদ্ধতা

ঋউঐ ভিসায় কর্মীরা অন্য কোনো বাড়িতে কাজ করতে পারেন না এবং পার্ট-টাইম চাকরি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত কাজ বা ব্যবসা করাও বেআইনি।

এ ভিসায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নেই, যা হংকংয়ের অভিবাসন নীতির অংশ।

সতর্কতা ও নিরাপত্তা নির্দেশনা

বিদেশগমনের ক্ষেত্রে প্রতারণার ঝুঁকি সবসময় থাকে। তাই ভুয়া এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে লেনদেন করা বিপজ্জনক। চুক্তি ছাড়া কাউকে টাকা দেওয়া যাবে না। বেতন কম দেওয়া, হেনস্তা বা অন্যায় আচরণ হলে সরাসরি খধনড়ঁৎ উবঢ়ধৎঃসবহঃ-এ অভিযোগ করা সম্ভব। নিজের সব নথি বুঝে রাখা এবং পাসপোর্ট নিজের কাছে রাখা নিরাপত্তার বড় অংশ।

বাংলাদেশি নারীদের নতুন সম্ভাবনা

বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর হংকং, এখানকার গৃহকর্মীর চাহিদা সবসময়ই স্থিতিশীল। বাংলাদেশের নারীরা দক্ষতা, পরিশ্রম ও মায়ের স্নেহময় আচরণের কারণে দ্রুতই এ বাজারে জায়গা করে নিচ্ছেন। নিরাপদ উপার্জন এবং নিজ পরিবারের উন্নতি দুটোই সম্ভব হচ্ছে এ পেশার মাধ্যমে। বিদেশে কর্মসংস্থানের এই পথ নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে বদলে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।