তার বিচরণ ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো যুগে। কিন্তু সাদাকালো পর্দার অভিনেতা হয়েও তিনি কালের সীমানা পেরিয়ে একাধিক প্রজন্মের মনে রঙিন আলো ছড়িয়েছেন। সুদর্শন নায়ক বলতে যে’কজন সত্তর-আশির দশকে বাঙালি দর্শকের মনজয় করেছেন, তরুণীদের স্বপ্নের পুরুষ হয়েছেন- তাদের অন্যতম বুলবুল আহমেদ। ঢাকাই চলচ্চিত্রে তাকেই প্রথম ‘মহানায়ক’ বলা হয়।
এমনকি ঢালিউডের প্রথম ‘দেবদাস’ও তিনিই। প্রখ্যাত এই অভিনেতার চলে যাওয়ার দিন আজ। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন এই মহাতারকা। আজ তার প্রয়াণের ১৫ বছর পূর্ণ হলো।
বাবার কথা বলতেই কান্না জড়িত কণ্ঠে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে মেয়ে তাজরিন ফারহানা ঐন্দ্রিলা বলেন, ‘গতকাল থেকেই মন খারাপ শুরু। এই দিনটা বাবাকে ভীষণ মিস করি। বিশেষ করে তার ছায়াটা খুব মিস করি। তিনি সবসময় অনুভাবেই থাকেন। আজকের দিনটা ভীষণ বেদনার। তিনি না থেকেও আমাদের সঙ্গে আছেন। তার জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি এতিমখানায় ৫০ জন অসহায় বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে। সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন।’
বুলবুল আহমেদের বায়োপিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার মেয়ে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা। সেটার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আরও সময় লাগবে। আমার বাচ্চা ছোট। তাছাড়া তড়িঘড়ি করে কিছু করা সম্ভব না। প্রচুর গবেষণার বিষয়। চলতি বছর শুরু করা সম্ভব নয়। সময় নিয়ে যতœ নিয়ে কাজটি করতে চাই।’
বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৪০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায়। তার আসল নাম তাবারক আহমেদ। বাবা-মা তাকে আদর করে বুলবুল বলে ডাকতেন। আর এই নামেই তিনি পরিচিত হন দেশজুড়ে। ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। এরপর তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন বুলবুল আহমেদ।
চাকরির পাশাপাশিই অভিনয় শুরু করেন তিনি। টেলিভিশন নাটকে অভিনয় দিয়েই শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এরপর একে একে তিনি প্রায় চার শতাধিক নাটকে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মালঞ্চ’, ‘ইডিয়েট’, ‘মাল্যদান’, ‘বড়দিদি’, ‘আরেক ফাল্গুন’ ও ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’।
বুলবুল আহমেদের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’ সিনেমার মাধ্যমে। এই সিনেমায় তার অভিনয় আলোচিত হয়। যার ফলে পরের বছর আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘অঙ্গীকার’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটিও দারুণ সাফল্য পায়।
ক্যারিয়ারে বুলবুল আহমেদ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য্য কন্যা’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘জীবন নিয়ে জুয়া’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘বধূ বিদায়’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দি ফাদার’ উল্লেখযোগ্য। তবে বুলবুল আহমেদ বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন যে’কটা সিনেমার জন্য সেগুলো হলো ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’ ও ‘মহানায়ক’। এই সিনেমাগুলো তাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়।
শুধু অভিনয়ই নয়, চলচ্চিত্র পরিচালনা করেও সফল হন বুলবুল আহমেদ। তার পরিচালিত ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘ভালো মানুষ’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কত যে আপন’ সিনেমাগুলো আলোচিত হয়েছে।
অভিনয়ের জন্য বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ১৯৭৮ সালে ‘বধু বিদায়’, ১৯৮০ সালে ‘শেষ উত্তর’ ও ‘১৯৮৭ সালে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
আপনার মতামত লিখুন :